মঙ্গলবার ● ১৬ অক্টোবর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » সফ্টওয়্যার দিয়ে জাল টাকা বানিয়ে বাজারে ছাড়ছে জালিয়াত চক্ররা
সফ্টওয়্যার দিয়ে জাল টাকা বানিয়ে বাজারে ছাড়ছে জালিয়াত চক্ররা
সিরাজুল ইসলাম: ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বাজারে ছেড়েছে জাল টাকার কারবারিরা। তাদের টার্গেট ছিল ১০০০ কোটি টাকার। টার্গেট পূরণের আগেই দু’টি চক্রের ১০ সদস্য মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা গোয়েন্দা পুলিশের রিমান্ডে জানিয়েছে- আরও ১০-১২টি চক্র রাজধানীতে জাল টাকা তৈরির কাজে সক্রিয়। এসব চক্রের সদস্যরা একে অপরের আত্মীয়স্বজন ও দীর্ঘ দিনের পরিচিত। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, জালিয়াত চক্রের এক সদস্য ইতিমধ্যে জাল টাকা বানানোর সফ্টওয়্যার তৈরি করেছে। তার নাম সাইফুল। সে কাঁটাবনে বসে কাজ করে। কারবারিদের কারখানায় গিয়ে সে পেনড্রাইভের মাধ্যমে সফ্টওয়্যার সরবরাহ করে। এতে তার সময় লাগে ২-৩ মিনিট। আর এই ২-৩ মিনিট সময়ের জন্য সে সম্মানী নেয় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এদিকে দেশে জাল টাকা তৈরির প্রবর্তক হিসেবে নিজের কথা স্বীকার করেছে গ্রেপ্তারকৃত দুরুজ্জামান ওরফে নুরুজ্জামান ওরফে জামান বিশ্বাস। সে জানায়, আমি প্রায় ৫০ জনকে জাল টাকা তৈরি শিখিয়েছি। আমার কাছ থেকে শিখে এখন অনেকেই জাল টাকার কারখানার মালিক। রাজধানীতে যাদের জাল টাকার কারখানা আছে তাদের মধ্যে রয়েছে- হুমায়ুন, কাউসার, আলাউদ্দিন, পলাশ, ইমন, বাবু, সেলিম, সাগর মাস্টার, কামাল প্রমুখ।
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মশিউর রহমান জানান, স্কুলের গণ্ডি না পেরোনো শান্তা ওরফে শাবানা এখন জাল টাকা তৈরির বড় কারিগর। তার বাসা ভাড়া ফ্রি। বেতন মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। নিজ স্বামীর হাত ধরেই শান্তা এ পেশায় আসে ৩-৪ বছর আগে। এবারই প্রথম সে ধরা পড়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে। তিনি জানান, ঈদের আগে একচেটিয়া বাজার দখলে জাকির রাজধানীতে থাকা (মতিঝিলস্থ রহমান প্লাজা) জাল টাকা তৈরির উন্নত মানের প্রায় সব কাগজ কিনে নেয়। ইতিমধ্যে সে ঈগল মার্কা ইয়েলো কাগজের ১০০টি বান্ডিল কিনেছে। ১০০টি বান্ডিল দিয়ে ২০০ কোটি টাকা তৈরি সম্ভব। উন্নতমানের কাগজের বেশির ভাগই জাকিরের দখলে চলে যাওয়ায় অন্য কারবারিরা জাকিরের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। তার কাছ থেকে তারা প্রতি লাখ টাকা ৮ হাজার টাকা করে কিনে নেয়। কিন্তু অন্য কারবারিদের কাছ থেকে তারা ৬ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনতে রাজি ছিল না।
রিমান্ডে থাকা শান্তা ওরফে শাবানা জানায়, আমার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের কল্যাণপুরে। ৫ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ১০-১২ বছর আগে ট্রাকচালক সাহেব আলীর সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। তার সঙ্গে ৬-৭ বছর সংসার করি। ওই সংসারে আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। মেয়ে সাথী তার দাদীর সঙ্গে থাকে। ছেলে সবুজ নানীর সঙ্গে থাকে। সাহেব দ্বিতীয় বিয়ে করায় ৪-৫ বছর আগে তাকে তালাক দিয়ে ঢাকায় এসে সানারপাড় এলাকার একটি গার্মেন্টে চাকরি নিই। এখানে এসে আমার এক ভাবীর (দীপালি) খালাতো ভাই সিরাজের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তাকে বিয়ে করি। জুরাইনের একটি বাসায় উঠি। এরপর জানতে পারি সে জাল টাকার কারিগর। পরে তার কাছ থেকে আমি টাকা তৈরির কৌশল রপ্ত করি। প্রথম দিকে ১০০ টাকার নোট বানাতাম। এখন ১০০০ টাকার নোট বানাই। শান্তা জানান, আমি কেবল টাকায় জলছাপ, শাপলা লাগানো এবং নিরাপত্তা সূতা বসানোর কাজ করতাম। বাকি কাজ করতো স্বামী সিরাজ। সে আরও জানায়, আমি ও আমার স্বামী জাল টাকার ব্যবসায়ী নই। বেতনভুক্ত কারিগর মাত্র। প্রথম দিকে রশিদ ব্যবসায়ীর কাজ করে দিতাম। হুমায়ুনসহ অন্য ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে প্রতি লাখ টাকা ৬ থেকে ৮ হাজার টাকায় কিনে নিতো। পরে সরাসরি হুমায়ুনের সঙ্গে কাজ শুরু করি। ৫-৬ মাস ধরে জাকিরের কাজ করছিলাম। আমাদের বাসা ভাড়ার টাকা (১৬ হাজার) জাকিরই পরিশোধ করতো। বেতনও দিতো মোটা অঙ্কের। আমরা টাকা বানিয়ে দেয়ার পর জাকির তার ভাই জালালকে দিয়ে পাইকারদের কাছে জাল টাকা সরবরাহ করতো। সে আরও জানায়, আমরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে দিনে এক কোটি টাকা বানাতে পারি।