শনিবার ● ১৩ অক্টোবর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » মেহগনি গাছের বীজ থেকে জৈবসার উদ্ভাবন
মেহগনি গাছের বীজ থেকে জৈবসার উদ্ভাবন
মেহগনি গাছের বীজ থেকে জৈবসার উদ্ভাবন করেছেন ডিজে অ্যাগ্রো লিমিটেডের গবেষক সৈয়দ আবদুল মতিন। তিনি দাবি করেন, নিম থেকে তৈরি সারের তুলনায় এটি আরও বেশি কার্যকর। এ জৈবসারের ব্যবহার জমির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি বালাই ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সৈয়দ আবদুল মতিন বাগেরহাট জেলায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা থাকাকালে মেহগনির তেল এবং নির্যাসের বহুবিদ ব্যবহার নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। পরে যোগ দেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডিজে অ্যাগ্রো লিমিটেডে। প্রতিষ্ঠানটিতে ‘মেহগনি অয়েল অর্গানিক পেস্টিসাইট অ্যান্ড মাল্টিপারপাস ইউস’ শীর্ষক প্রকল্পে গবেষণাপ্রধান হিসেবে এ জৈবসার আবিষ্কার করেছেন।
তিনি বলেন, ‘১০ বছরের বেশি সময় ধরে মেহগনির তেল এবং নির্যাসের বহুবিদ ব্যবহার নিয়ে কাজ করেছি। বালাই ব্যবস্থাপনায় কয়েকটি প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছি। কিন্তু সম্প্রসারণ না হওয়ার কারণে উত্সাহ হারিয়ে ফেলি। সরকারি চাকরিশেষে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হয়ে জৈবসার উদ্ভাবনের কাজ শুরু করি।’ সরকার অনুমতি দিলে গবেষণার ফল সার্থকভাবে প্রয়োগ করা যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সরকারের সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে কাজ করেছেন সৈয়দ আবদুল মতিন। ২০০৩ সালে কৃষকদের মধ্যে মেহগনি ভেষজ বালাইনাশক বিতরণ করেন তিনি। এরপর ধানসহ অন্যান্য ফসলের বিভিন্ন পোকা দমনে কীভাবে কার্যকর করা যায় সেটা নিয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি ধানের পাতা মোড়ানো পোকা, জাব পোকা, কুমড়া গাছের রেড পামকিন, সবজির হোয়াইট ফ্লাই, মাছি পোকা দমনে কার্যকর ওষুধ উদ্ভাবন করেন। ২০০৭ সালে বোরো ধানের বীজতলায় থ্রিপস পোকা ব্যবস্থাপনায় সফলতা পেলেও সম্প্রসারণ ও অর্থায়নের অভাবে তিনি গবেষণা কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিমের পর মেহগনি থেকে প্রথমবারের মতো জৈবসার উদ্ভাবন হয়েছে। এই সার জমির উৎপাদনশীলতা ২০-৩০ শতাংশ বাড়াতে সক্ষম হবে। এ ছাড়া ক্ষতিকারক পোকা দমন ও উপকারী পোকাকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে। বিশেষ করে অ্যান্টি ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। মেহগনি গাছের বীজ থেকে সার উদ্ভাবন হলেও বাকল থেকেও তৈরির কাজ চলছে। উদ্ভাবিত জৈবসারের নমুনা সরকারের প্রত্যয়নকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দেয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমতির পরই বাজারজাত করা হবে।
এ বিষয়ে ডিজে অ্যাগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাউদ ফারহান বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই আমরা আবদুল মতিনের কাজগুলো নিয়ে পর্যবেক্ষণ করি। এগুলো থেকে ভিন্ন ধারার কিছু প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্যই তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।’ তিনি জানান, নতুন উদ্ভাবিত সার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে নমুনা পাঠানো হয়েছে। এখন সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছি।
এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. জহির উদ্দীন আহমদ বলেন, স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত যেকোনো প্রযুক্তিই দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ও তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে থাকে। এ প্রযুক্তিকে দীর্ঘস্থায়ী এবং ফলপ্রসূ করতে সরকারের বিভিন্ন ধাপগুলোয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বাজারজাত করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।