শনিবার ● ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » সামাজিক যোগাযোগ সাইট তৈরিতে মধ্যপ্রাচ্যের সেলফোন অপারেটরদের জোট
সামাজিক যোগাযোগ সাইট তৈরিতে মধ্যপ্রাচ্যের সেলফোন অপারেটরদের জোট
ফেসবুক ও টুইটারের আদলে মধ্যপ্রাচ্যের জনগণের জন্য সামাজিক যোগাযোগের সাইট তৈরির পরিকল্পনা করছে এ অঞ্চলের টেলিকম অপারেটররা। এর মাধ্যমে আরবি ভাষাভাষী ৩৫ কোটি জনগণকে একটি নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে আনার পাশাপাশি সেলফোন অপারেটররা আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। খবর রয়টার্সের।
কারিগরি ও আর্থিক কারণে উচ্চাকাঙ্ক্ষী এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা একক কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব না হলেও জোটগতভাবে এ অঞ্চলের সেলফোন অপারেটররা এটিকে বাস্তবে পরিণত করতে পারবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মতে, এ প্রকল্প সফল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বিশ্বজুড়ে ৩৫ কোটির বেশি মানুষ আরবি ভাষা ও সংস্কৃতির অনুসারী।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেলফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ডিইউর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওসমান সুলতান বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ এককভাবে কোনো অপারেটরের পক্ষে নেয়া অসম্ভব। এককভাবে কেউ এটি করতে চাইলে তা শুধু অপারেটরটির গ্রাহকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। সফল হওয়ার মতো যথেষ্ট সুযোগ প্রকল্পটি পাবে না। তবে আরব বিশ্বের কথা বিবেচনা করে অপারেটররা কাজ করলে এটির সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১২ মাস ধরে আরব বিশ্বের বড় বড় সেলফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ওসমান এ প্রস্তাবনা পেশ করেছেন বলে রয়টার্সকে জানান।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক ধরনের হতাশা থেকে এ ধরনের প্রকল্পের বিষয়ে চিন্তা করছে সেলফোন অপারেটররা। দ্রুতগতির তথ্য আদান-প্রদানের জন্য শক্তিশালী নেটওয়ার্ক স্থাপনে অপারেটরগুলো প্রচুর বিনিয়োগ করলেও সে হারে তাদের আয় বাড়ছে না। কেবল ডাটা আদান-প্রদানের বিপরীতে একটি নির্দিষ্ট অর্থ আয় করছে তারা। এর বিপরীতে এ নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে।
আয়ের সিংহভাগ ফেসবুক, গুগল, অ্যাপল ও টুইটারের মতো ‘ওভার দ্য টপ’ (ওটিটি) প্রতিষ্ঠানগুলোর পকেটে যাচ্ছে। সুলতানের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘ওটিটি প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় আমাদের কাছেও আসে না, তারা আমাদের দুঃখও বোঝে না। প্রতি আট থেকে নয় মাসে আমাদের নেটওয়ার্কে তথ্য প্রবাহ দ্বিগুণ হচ্ছে। কিন্তু সে হারে আমাদের আয় বাড়ছে না। তাই ওটিটি প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের একটা অংশের দাবিদার আমরা।’
প্রস্তাবিত আরব অনলাইন প্লাটফর্মে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ছাড়াও পণ্য ও সেবার জন্য অনলাইন শপিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান সুলতান। ব্যবহারকারীরা এ সাইটে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন সেবাও কিনতে পারবেন।
এ ধরনের একটি সাইট খোলার বিষয়ে বললেও বিস্তারিত কোনো তথ্য জানাননি ওসমান। অনলাইন প্লাটফর্ম-সম্পর্কিত আলোচনার কিছু অংশ একান্ত গোপনীয় বিধায় তিনি তথ্য প্রকাশ করেননি। আরব বিশ্বের বাকি সেলফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও অনলাইন প্লাটফর্ম সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে বাহরাইন টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আল খলিফা এ ধারণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তার মতে, স্ট্রিমড টিভি কিংবা ভিডিও অন ডিমান্ডের মতো ওটিটি সার্ভিস চালুর চিন্তা সেলফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাথায় রয়েছে। এ ধরনের পরিবর্তনের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
অনলাইন প্লাটফর্ম চালুর উদ্যোগ এর আগেও বেশকিছু সেলফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নিয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলো বিপণন শক্তি এবং কারিগরি দিক থেকে বৃহত্ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পেরে উঠছে না। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ইনফরমা টেলিকম অ্যান্ড মিডিয়ার সিনিয়র বিশ্লেষক গুইললেরমো এসকোফেট এ প্রসঙ্গে বলেন, ওটিটি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন। কারণ সেলফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ওটিটি প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো ব্র্যান্ড আবেদন, প্রতিযোগিতার মনোভাব ও দ্রুততর সেবা দানের মতো গুণ নেই। যুক্তরাজ্যের ভোডাফোন ২০০৯ সালে ভোডাফোন ৩৬০ নামে একটি সেবা চালু করেছিল। পর্যাপ্ত সাড়া না পাওয়ায় ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠানটি এ সেবা বন্ধ করে দেয়।
মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা ইন্টারনেট ওয়েবসাইটগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়। সামাজিক যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফেসবুকে আরবি ভাষা ব্যবহার সুবিধা রয়েছে। চলতি বছরের ৩০ জুন প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আরব বিশ্বের ৪ কোটি ৫২ লাখ সদস্য ফেসবুকে রয়েছে। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে যা ৫০ শতাংশের বেশি। দুবাই স্কুল অব গভর্নমেন্ট কর্তৃক পরিচালিত আরব সোস্যাল মিডিয়া রিপোর্ট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।