বুধবার ● ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » তিন বছর পর ট্রিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠান হবে অ্যাপল
তিন বছর পর ট্রিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠান হবে অ্যাপল
অগ্রগতির বর্তমান ধারা ধরে রাখতে পারলে মাত্র তিন বছর পর ২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল লাখো কোটি ডলারের প্রথম কোম্পানি হবে অ্যাপল। বিশ্লেষকরা এক পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
আরেক দল বিশ্লেষক জানিয়েছেন, এত সময় লাগবে না, আগামী বছরের ১৬ আগস্ট ট্রিলিয়ন ডলারের (লাখো কোটি ডলার) কোম্পানি হবে অ্যাপল। গত শুক্রবার সর্বশেষ লেনদেন হওয়া শেয়ারের দাম অনুযায়ী বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বাজার মূল্য ৬৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।
বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান মেটামার্কেটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল ই-ড্রিসকল বলেন, এ রকম কিছু বিশ্বাস করা আসলেই কঠিন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি আইপ্যাড ও আইফোনের ওপর ভর করে দ্রুত বড় হচ্ছে।
শুরুতে ছোট একটি কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ছিল অ্যাপল। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের পথিকৃত্ হয়ে উঠেছে স্টিভ জবসের হাতে গড়া এ কোম্পানি। উন্নতির পথে এর সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ানো সব প্রতিষ্ঠানই দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। আইপড, আইফোন, আইপ্যাড, ম্যাকবুক প্রতিটি ক্ষেত্রে বাজারে আধিপত্য করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির রাতারাতি সাফল্য নকিয়া, রিসার্চ ইন মোশন (আরআইএম), ডেল ও হিউলেট প্যাকার্ডের মতো বাঘা বাঘা প্রতিষ্ঠান অনেকটা বাধ্য হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখেছে। ধীরে ধীরে অ্যাপলের শেয়ার মূল্য বেড়েছে। এর বিপরীতে পড়ছে নকিয়া, আরআইএমের মতো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
বিটিআইজি রিসার্চের গবেষক ওয়াল্টার পিসাইক বলেন, অ্যাপল অবশ্যই একটি অন্যরকম প্রতিষ্ঠান। তবে নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে নকিয়াও একই ধরনের প্রতিষ্ঠান ছিল। কেউ ভাবেনি এ প্রতিষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। আজ দেখুন তারা কোথায় রয়েছে।
অ্যাপলের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে একটি আশঙ্কার কথাও জানাচ্ছেন অনেক বিশ্লেষক। ড্রিসকল বলেন, যদি নাটকীয়ভাবে অবস্থার পরিবর্তন হয় তাহলে অ্যাপলের অবস্থা আবার মাইক্রোসফটের মতো হতে পারে।
১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে মাইক্রোসফটের মূল্য যখন ৬১ হাজার ৬৩০ কোটি ডলার হয়েছিল, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ১ লাখ কোটি ডলার মূল্যসীমায় পৌঁছানো সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু পরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম কমতে থাকে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বাজার মূল্য ২৬ হাজার ১০০ কোটি ডলার।
অ্যাপলের পক্ষে অবশ্য ইতিবাচক মতামতের পরিমাণই বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের মিডলটনে এক বিনিয়োগ গ্রুপ পরিচালনাকারী চার্লস এস ওয়ালম্যান বলেন, ২০০০ সালে মাইক্রোসফট সবচেয়ে দামি প্রতিষ্ঠানের আসন দখল করে। ২০ বছর পিসির বাজারে রাজত্বের পর তারা এ অবস্থানে পৌঁছেছিল। এর বিপরীতে অ্যাপল আইফোনের কল্যাণে এ অবস্থায় পৌঁছেছে। প্রতিষ্ঠানটির আইফোন বাজারে এসেছে মাত্র পাঁচ বছর। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিশ্বের মাত্র ৪৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষ অ্যাপলের ব্যবহারকারী, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬ শতাংশ। এর পরিমাণ ১০ থেকে ১২ শতাংশ না হওয়ার কোনো কারণ নেই।
যেকোনো কোম্পানির প্রবৃদ্ধির মূল উপাদান নতুন পণ্য আনা। অ্যাপল নতুন পণ্য যদি নাও আনে, তাও ১ লাখ কোটি ডলারের কোম্পানি হওয়া প্রতিষ্ঠানটির জন্য কঠিন হবে না বলে মনে করে বিজিআইরিসার্চ। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, অ্যাপলের পণ্য বিক্রির পরিমাণ দ্বিগুণ হলেই এটি সম্ভব।
প্রতিষ্ঠানটির হিসাব অনুযায়ী, আইফোন ৫ এসেছে এ প্রান্তিকে। আগামী ডিসেম্বরে ন্যূনতম সাড়ে চার কোটি আইফোন বিক্রি হবে। আগের বছর একই সময় আইফোন বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর ফলে অ্যাপলের আয় দ্বিগুণ হবে।
অ্যাপলের প্রবৃদ্ধির অনেক ক্ষেত্র রয়েছে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা। এখনো চীনের বাজার ধরতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এ বাজার ধরতে পারলে প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে বিজিআইরিসার্চ। চীনের বাজারে সেলফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে ১০০ কোটি। এ বাজারের বেশির ভাগ গ্রাহকই এখন সেলফোনের বদলে স্মার্টফোনে ঝুঁকছেন। এটি অ্যাপলের জন্য অনেক বড় সুযোগ বলে জানিয়েছে বিজিআইরিসার্চ।