মঙ্গলবার ● ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে মিয়ানমারের টেলিকম খাত
সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে মিয়ানমারের টেলিকম খাত
রাজনৈতিক জটিলতায় নানাভাবেই পিছিয়ে পড়ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমার। তবে সাম্প্রতিক সংস্কার উদ্যোগের ফলে দেশটিতে নানা খাতের ব্যবসা সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে। এর মধ্যে অন্যতম টেলিকম খাত। এর মধ্যেই সরকার এ খাতের সংস্কার কাজ শুরু করেছে। খবর রয়টার্সের।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ৬ কোটি মানুষের দেশটিতে টেলিকম সেবা খুবই নগণ্য। এখানে সেলফোন ব্যবহারের হার পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। সেলফোন সংযোগ বা সিমের দামও আকাশছোঁয়া। সেলফোনে ই-মেইল চেক করা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের কথা ভাবাই যায় না। পর্যটকরা মিয়ানমারের বিমানবন্দর থেকে ভাড়ায় সিম সংগ্রহ করে। আর দেশটির জনগণ ‘ওয়ানটাইম’ সিম ব্যবহারের সুযোগ পান, যাতে ২০ ডলারের সমপরিমাণ ক্রেডিট শেষ হওয়ার পর সিমটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যায়। মিয়ানমারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের (এমপিটি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কিয়াও সো বলেন, ‘আমরা টেলিকম খাতকে পুনর্গঠন করার কাজ শুরু করেছি। এ নিয়ে বেশি দিন দেরি করা যায় না। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য খাতটি গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরও জানান, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানিসহ ১০টি দেশের ৬৪টি প্রতিষ্ঠান টেলিকম লাইসেন্স পেতে টেন্ডারে অংশ নেয়। বাছাই করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন কমে এসেছে।
কিয়াও জানান, চূড়ান্তভাবে চারটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়া হবে। এর মধ্যে মিয়ানমারের দুটি ও দুটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পাবে। ২০১৩ সাল নাগাদ ফোরজি নেটওয়ার্ক সেবাও দেশটিতে সম্প্রসারিত হবে।
তিনি জানান, একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থাও গঠিত হবে মিয়ানমারে। মিয়ানমার টেলিকম কোম্পানি নামে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানও গঠন করা হবে, যে কোম্পানি একটি অপারেটর লাইসেন্স পাবে। এ ছাড়া ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্য গঠন করা হবে ইয়াত্রাপর্ন টেলিপোর্ট কোম্পানি।
দেশটির টেলিকম খাতের একটি সূত্র জানিয়েছে, খাতটি এখন বিদেশী বিনিয়োগকারীর জন্য আকর্ষণীয় জায়গায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কাজ করার সম্ভাবনা আছে। তবে দুটির বেশি বিদেশী প্রতিষ্ঠান সেখানে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
নামমাত্র ব্যবহারকারী থাকায় টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সেখানে অপেক্ষা করছে অপার সম্ভাবনার এক বাজার। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী মিয়ানমারের জনসংখ্যার ১ দশমিক ২৪ শতাংশ সেলফোন ব্যবহারের সুবিধা পায়। অথচ প্রতিবেশী দেশ কম্বোডিয়া ও লাওসে সেলফোন ব্যবহারের হার ৫৭ ও ৬৪ শতাংশ। থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় এ হার শতভাগের বেশি। অর্থাত্ সেখানে ব্যবহারকারীপ্রতি একাধিক সংযোগ রয়েছে অনেক। তবে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে বর্তমানে সেলফোন ব্যবহারকারীর হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ দাবি করা হয়। তবে এ হার নিয়ে বিশ্লেষকরা সন্দিহান।
মিয়ানমারে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সুইডেনের টেলিয়াসনেরা এবি, মালয়েশিয়ার অজিয়াটা ও নরওয়ের টেলিনর। অজিয়াটা ও টেলিনর এশিয়ার থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও অন্য কয়েকটি দেশে ভালো ব্যবসা করছে। টেলিনর গ্রুপের গ্লেন ম্যান্ডেলিড জানিয়েছেন, যখন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে, তখন এখান থেকে প্রচুর রাজস্বের সম্ভাবনা থাকবে। বিশ্বে যেকোনো বাজারেই টেলিকম খাতের সুযোগ কমে এসেছে। দেশটি নীতিমালা চূড়ান্ত করলে এখানে বিনিয়োগের সব ধরনের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে।
মিয়ানমারে সুযোগ তৈরি করতে যাওয়া আরেক প্রতিষ্ঠান ডিজিসেল। প্রতিষ্ঠানটি ৩১টি দেশে বিনিয়োগ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ওক্যারোল বলেন, ‘মিয়ানমারের ভোক্তা ও বাণিজ্য সম্পর্কে আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি। আমরা এখানে বিনিয়োগের সুযোগ পেলে দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য প্রস্তুত।’ বিনিয়োগের জন্য তৈরি আছে সিঙ্গাপুরের টেলিকম প্রতিষ্ঠান সিংটেলও।
দেশটির টেলিকম খাত নিয়ে ঘুরে-ফিরে নীতিমালার কথাই বারবার আসছে। আন্তর্জাতিক টেলিকম সংস্থার (আইটিইউ) সহযোগিতায় দেশটির নীতিমালা খসড়া তৈরির কথা শোনা যাচ্ছে। তবে খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের মধ্যে ৩ কোটি জিএসএম গ্রাহক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটির টেলিকম খাতকে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক। আন্তর্জাতিক এ সংস্থার পক্ষ থেকে দেশটির টেলিকম খাতকে শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে আহ্বান জানানো হয়। বিশ্বব্যাংকের মিয়ানমার দফতর থেকে বলা হয়, সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যৌক্তিক ও বিশ্বাসযোগ্য নীতিমালা তৈরির মাধ্যমে গ্রাহককে যথাযথ সেবা দিতে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিনিয়োগ কাঠামো তৈরি করা। সংস্থাটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, মিয়ানমার যে বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে প্রস্তুত, তা বিশ্বকে দেখানোর উপযুক্ত সময় এসেছে।