সোমবার ● ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » চীনা প্রযুক্তি ঠেকাতে আইন করতে পারে অস্ট্রেলিয়া
চীনা প্রযুক্তি ঠেকাতে আইন করতে পারে অস্ট্রেলিয়া
যোগাযোগ নেটওয়ার্ক রক্ষায় অস্ট্রেলিয়া নতুন আইন প্রণয়ন করতে পারে। এ আইন হলে হুয়াউই ও জেডটিইর মতো চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো সে দেশে কাজ করতে পারবে না। টেলিকম যন্ত্রাংশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াউইয়ের এক কর্মকর্তা ওয়াশিংটন টাইমসকে এ তথ্য জানান।
গত বছর অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের কাজ পেতে দরপত্র জমাদানে হুয়াউইয়ের অস্ট্রেলীয় শাখাকে নিষেধ করা হয়। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে চীনা প্রতিষ্ঠানটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বলে জানানো হয়। সে সময় চীনা সরকার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে।
চীনাদের নিষিদ্ধ করতে নতুন কোনো আইন প্রণয়ন করা হলে অস্ট্রেলিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন হুয়াউয়ের অস্ট্রেলিয়া শাখার চেয়ারম্যান জন লর্ড। গত সপ্তাহে তিনি বলেন, কেবল জাতীয়তার কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্ট্রেলিয়ায় কাজ না পাওয়ার বিষয়টি হতাশাজনক। এ ক্ষেত্রে দেশটিতে ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমে যাবে, যা মোটেও ভালো হবে না।
গত সপ্তাহে এ রকম আইন প্রণয়নের বিষয়ে কাজ শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার সংসদীয় কমিটি। একই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রেও শুনানিতে হাজির হয় হুয়াউই ও জেডটিই। দেশটির হাউস ইনটেলিজেন্স কমিটি বছরখানেক ধরে চলা তদন্তের অংশ হিসেবে সম্প্রতি জেডটিই করপোরেশন এবং হুয়াউইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘনে হুয়াউই ও জেডটিই এর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ব্যাংক ও টেলিকম অপারেটরদের নেটওয়ার্ক হুয়াউই ও জেডটিই তৈরি করেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা লঙ্ঘিত হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব ইন্টেলিজেন্সের কমিটি হুয়াউই ও জেডটিইকে অভিযুক্ত করে। তারা এ বিষয়ক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করা হয়। এর বিপরীতে হুয়াউই ও জেডটিই কমিটিকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়।
অস্ট্রেলিয়ায় কেবল চীনাপ্রযুক্তি কোম্পানিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কোনো আইন প্রণয়ন করা হলে তা বিশ্ববাণিজ্যের ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ বলে মনে করেন জন লর্ড। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সংসদীয় কমিটি দেশের সাইবার নিরাপত্তা সুরক্ষিত করার জন্য কাজ করছে। বিদেশী কোনো প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান দেশটিতে কাজ করলে জাতীয় যোগাযোগ নেটওয়ার্ক হুমকির মুখে পড়বে কি না তা-ও খতিয়ে দেখছে। কিছু বিদেশী প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানকে তারা এরই মধ্যে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু তাদের নাম জানানো হয়নি।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কমিটি বের করেছে কিছু বিদেশী প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ার নেটওয়ার্কের জন্য হুমকিস্বরূপ। এরপর হয়তো দেখা যাবে, এ ধরনের কোম্পানিগুলো সবই একটি দেশের।
তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া আইনের অপব্যবহার করতে পারে এবং দেশটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র কমিয়ে আনতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ায় গত বছর জাতীয় ব্রডব্যান্ড প্রকল্পে হুয়াউইকে কেন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়া সরকার বিস্তারিত কিছু জানায়নি। বিষয়টি নিয়েও আপত্তি প্রকাশ করেন জন। তিনি বলেন, ‘জানতেও পারলাম না যে, কেন আমরা নিষিদ্ধ হয়েছি।’
৪৯০ কোটি ডলারের এ প্রকল্পকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কগুলোর অন্যতম বলে বিবেচনা করা হয়। বিস্তারিত কিছু না বললে কেবল নিরাপত্তার স্বার্থে এ কাজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার সরকার।
এ বিষয়ে হুয়াউয়ের ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক বলেন, এ প্রকল্পে কাজ করার জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকার প্রাথমিকভাবে হুয়াউইকে রেখেছিল। পরে অজ্ঞাত কোনো কারণে হুয়াউইকে নিষিদ্ধ করা হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ব্যবসা করতে বর্তমানে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে হুয়াউই ও জেডটিই। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জেডটিই ইরানকে বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্য সরবরাহ করেছে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে জেডটিই এ অভিযোগ অস্বীকার করে। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে টেলিকম ও নেটওয়ার্ক যন্ত্রাংশ উত্পাদনে শীর্ষে রয়েছে সুইডেনের এরিকসন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চীনের হুয়াউই ও ফ্রান্সের অ্যালকাটেল লুসেন্ট। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে নকিয়া সিমেন্স ও চীনের জেডটিই।