শুক্রবার ● ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » প্রতিবন্ধী সহায়ক প্রযুক্তি প্রদর্শনী
প্রতিবন্ধী সহায়ক প্রযুক্তি প্রদর্শনী
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাবহার দিন দিন গতিশীল হচ্ছে । প্রযুক্তি আমাদের জীবনের এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে । আমাদের জীবনে বিনোদন, খেলাধুলা,পড়ালেখা সবকিছুই এখন প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে । সাধারন মানুষতো বটেই প্রতিবন্ধীদের জন্যও এখন নিত্যনতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার হচ্ছে ।সম্প্রতি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) মিলনায়তনে ‘প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি ও তাঁদের অভিগম্যতা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিপণ্য প্রদর্শনীতে দেখা মিলল এসব যন্ত্রিক ব্যবস্থার। সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি) ও ডিআইইউ যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এতে সহযোগী ছিল মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও ভারতের কারিশমা এন্টারপ্রাইজেস।দৃষ্টি, ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন, শ্রবণ, বাক্, অটিজম, সেরিব্রাল পলসি, শারীরিক, বুদ্ধি, মানসিক প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার-উপযোগী বাংলাদেশে স্বল্প প্রচলিত ও অপ্রচলিত প্রায় ২০ ধরনের প্রযুক্তি প্রদর্শিত হয় এ আয়োজনে।‘এখানে এমন কিছু প্রযুক্তি দেখেছি, যা প্রতিবন্ধীদের জন্য খুবই সহায়ক। কেনার সুযোগ পেলে প্রতিবন্ধীদের স্কুলে এ ধরনের প্রযুক্তি খুবই কাজে দেবে।’ বললেন নরসিংদী থেকে আসা মাসুদা ফারুক।যাঁরা শারীরিকভাবে কম্পিউটার চালাতে পারেন না, তাঁদের জন্য আছে ‘কণ্ঠ অনুধাবন সফটওয়্যার’। এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী মুখে ইংরেজিতে কোনো নির্দেশ দিলে কম্পিউটার সেভাবে কাজ করবে। এর দাম ১৬ হাজার টাকা। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য আরও আছে স্পর্শকাতর কি-বোর্ড, ট্যাক্টিক টাচপ্যাড, কুইক টশার, একহাতি টাইপরাইটার, মুখের অঙ্গভঙ্গিতে কাজ করা সফটওয়্যার ইত্যাদি।অটিস্টিক শিশুদের বিকাশে বিশেষ সফটওয়্যারে যোগ-বিয়োগ, ভাষা, সময়সূচি ও কম্পিউটারের নানা দিক শেখানো যাবে এই ১১টি সফটওয়্যারের বিশেষ সেটের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে শিশুরা ছবিগুলোকে নিজেদের মতো করে হাতের স্পর্শে সাজাতে পারবে। আঁকতে পারবে নিজেদের মনের মতো কার্টুন। এই সফটওয়্যার সেটের দাম ৭৭০ ডলার।অন্ধজনে দেবে আলোব্রেইল প্রিন্টারে যত দ্রুত কাগজ প্রিন্ট করা যায়, তত মঙ্গল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের। এমন প্রিন্টারের চাহিদা ও ব্যবহার বাড়ছে দিন দিন। ঘণ্টায় প্রায় ৯০০ পাতা প্রিন্ট করতে সক্ষম ব্রেইল প্রিন্টার মুগ্ধ করেছে প্রদর্শনীতে আসা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ব্রেইল ছাড়া পড়ার আরেকটি মাধ্যম হলো শ্রুতি। www.talkinglibrary.net ওয়েবসাইটে প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর বেশ কিছু শ্রুতি-বই পাওয়া যাবে।এ ছাড়া উপস্থিত পাঠযন্ত্র, পাঠ পড়ার যন্ত্র, টকিং সফটওয়্যার, মনিটর স্ক্রিন ম্যাগনিফায়ার যন্ত্র, তারবিহীন এফএম শ্রবণযন্ত্র ইত্যাদির ব্যবহারও বিস্তারিত উপস্থাপন করা হয়।তাঁরাই যখন প্রশিক্ষকসিডিডির প্রকল্প ব্যবস্থাপক রাখী বড়ুয়া বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের মুখের ও মনের ভাষাটা কিন্তু প্রতিবন্ধীরাই ভালো বুঝতে পারেন। তাই সবচেয়ে ভালো হয়, যদি প্রতিবন্ধীরাই সব ধরনের প্রতিবন্ধীদের তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণটা সেরে ফেলতে পারেন। এতে প্রতিবন্ধীদের বুঝতে ও ধারণ করতে সহজ হয়।’ প্রদর্শনীতে প্রায় ১২ জন প্রতিবন্ধী প্রযুক্তিগুলোর কার্যকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে আগত প্রতিবন্ধী ও সাধারণ মানুষকে জানান।বাবা-মেয়ের কথাবাংলাদেশে এ রকম একটি প্রদর্শনীতে সহযোগিতা করতে ভারত থেকে প্রায় ১৫ ধরনের প্রযুক্তিপণ্য নিয়ে এসেছে মুম্বাইয়ের কারিশমা এন্টারপ্রাইজেস। এসেছেন এর প্রধান নির্বাহী রাম আগারওয়াল ও তাঁর মেয়ে কারিশমা আগারওয়াল। রাম আগারওয়াল নিজে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। প্রায় পঁচিশ বছর ধরে শারীরিক অসুস্থতায় তিনি চোখে দেখতে পান না। আর মেয়ে মুম্বাইয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাস করে বাবার সঙ্গেই কাজ করছেন। প্রতিবন্ধীদের প্রযুক্তি নিয়ে কাজের বিষয়ে রাম আগারওয়াল বলেন, ‘নিজে প্রতিবন্ধী হওয়ায় এই কাজের প্রতি আগ্রহটা বেড়ে যায়।’ আর মেয়ে কারিশমা জানান, বাবাই তাঁর প্রেরণা। বাবার কাজেই থাকতে চান আজীবন।চাই কিছু সুবিধাপ্রতিবন্ধীবান্ধব এসব প্রযুক্তি দেশে সহজলভ্য করতে সাধারণ প্রযুক্তিপণ্য আমদানির নিয়মের বাইরে এ ধরনের সেবাপণ্য আমদানিতে সহজ শর্ত ও শুল্ক মওকুফের দাবি জানান প্রতিবন্ধীরা। শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মো. হাসানউদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রদর্শনীতে আমার ব্যবহারে সহায়ক একটি প্রযুক্তি দেখলাম। কিন্তু দাম অনেক বেশি হওয়ায় আমার জন্য এটি কেনা দুরূহ।’ প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রযুক্তি সহজলভ্য ও সস্তা হোক, এটা সবারই প্রত্যাশা।