বুধবার ● ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম আনবে মজিলা
স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম আনবে মজিলা
স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেমের (ওএস) বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড। বিশ্বব্যাপী এর বাজার দখল ৫০ শতাংশেরও বেশি। এ বাজারের জন্য এবার অপারেটিং সিস্টেম আনার পরিকল্পনা করছে মজিলা। এটির ফায়ারফক্স অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েডের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা। খবর এনডিটিভির।
আগামী বছরের শুরুতে নতুন এ অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আসবে মজিলা। মূলত অ্যান্ড্রয়েডের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলেও এর প্রতিদ্বন্দ্বীদের তালিকায় আরও রয়েছে অ্যাপল ও আরআইএম। এ তিনটি প্রতিষ্ঠানই গত বছর ন্যূনতম ২০ হাজার কোটি ডলার আয় করেছিল। এর বিপরীতে গত বছর মজিলার রাজস্ব হয় ১২ কোটি ১০ লাখ ডলার। অর্থ আয়ের বিচারে অনেক ছোট মজিলা তাই অন্যদের সঙ্গে কতটুকু প্রতিযোগিতা করতে সমর্থ হয়, তাও দেখার বিষয়।
কয়েকজন বিশ্লেষক জানিয়েছেন, ডেস্কটপের জন্য ইন্টারনেট ব্রাউজার সফটওয়্যার হিসেবে মজিলার ফায়ারফক্সের বাজার দখল কমে যাচ্ছে। ফায়ারফক্সের বাজার দখলে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে গুগলের ইন্টারনেট ব্রাউজার সফটওয়্যার ক্রোম। তবে ফায়ারফক্সের যে পরিমাণ বাজার দখল রয়েছে, তাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে গুগল। কারণ ফায়ারফক্সে ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগলই ব্যবহূত হয়।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, প্রযুক্তি খাতের বাজার দখলে পিসির মতোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট কম্পিউটার। কাজেই মজিলার মোবাইল প্লাটফর্মের দিকে ঝোঁকাই স্বাভাবিক। আইএইচএস স্ক্রিন ডাইজেস্টের মোবাইল বিশ্লেষক আয়ান ফগ বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটে দিন দিন নতুনত্ব আসছে। মজিলার মূল লক্ষ্য ওপেন সোর্স সফটওয়্যার জনপ্রিয় করা।’ বিশ্লেষকদের মতে, আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড ও উইন্ডোজ ফোনে ব্যবহূত ব্রাউজারের বিকল্প তৈরি করলেই সব কাজ শেষ হয়ে যায় না। কেবল অ্যান্ড্রয়েডেই মজিলার ব্রাউজারের মোবাইল সংস্করণ ব্যবহার করা যায়। অ্যাপলের আইওএস ও মাইক্রোসফটের ওএসে তৃতীয়পক্ষীয় সফটওয়্যার চালানোর ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে কিছুসংখ্যক ব্যবহারকারী চাইলেই তাদের ডিফল্ট ব্রাউজার ছেড়ে অন্য ব্রাউজার ব্যবহার করতে পারবেন। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে স্মার্টফোনের জন্য নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম আনার উদ্যোগ নিয়েছে মজিলা।
অ্যান্ড্রয়েডের মতো ফায়ারফক্স মোবাইল ওএসটি লিনাক্সভিত্তিক। ওএসটি ওপেন সোর্সের হওয়ায় এতে পরিবর্তন আনা সহজ। যেকোনো ডেভেলপারই তা করতে পারে। ফায়ারফক্স ওএসে এইচটিএমএল৫ ওয়েব প্রোগ্রামিং ব্যবহার করবে মজিলা। এ পদ্ধতিতে প্রোগ্রামিং করা অ্যাপ যেকোনো প্লাটফর্মেই চালানো যাবে। এক বিবৃতিতে মজিলার পক্ষ থেকে জানানো হয়, এইচটিএমএল৫ ব্যবহার করায় অনেক সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। অনেক ধরনের স্মার্টফোন থেকেই ব্যবহার করা যাবে অ্যাপগুলো।
স্মার্টফোন নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে টেলিকম অপারেটরদের সহযোগিতা পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। মজিলা এর মধ্যেই বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয প্রতিষ্ঠানের সবুজ সংকেত পেয়েছে। এগুলো ডয়েস টেলিকম, স্প্রিন্ট ও টেলিফোনিকা। বিশ্লেষক আয়ান ফগ বলেন, টেলিকম অপারেটররা স্মার্টফোনের বাজারে প্রতিযোগিতা আশা করে। তারা চায় না, এ বাজারে কেবল অ্যাপল ও গুগলই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক।
বিশ্লেষকরা আরও জানিয়েছেন, পশ্চিমা দেশের বাজারে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা প্রায় অসম্ভব হবে মজিলার জন্য। উন্নয়নশীল দেশের বাজারে এখনো ভালো সুযোগ আছে। সেখানে সস্তা দামের অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন কেবল প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ধনীরাই অ্যাপল বা মাইক্রোসফটের পণ্য ব্যবহারের সুযোগ পান। মজিলার মূল কৌশল বেশ পরিষ্কার। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য থাকবে স্মার্টফোনের দাম কমিয়ে আনা। মজিলাপ্রধান গ্যারি কোভাক বলেন, আগামী বছরগুলোয় শত কোটি নতুন ব্যবহারকারী প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন। কাজেই দামের দিক থেকে স্মার্টফোনকে অনেকের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা জরুরি।
বাজার পর্যবেক্ষকরা মজিলার কার্যকারিতা দেখার অপেক্ষায় আছেন। আয়ান ফগ বলেন, উন্নয়নশীল দেশের বাজারে অ্যান্ড্রয়েডের একচেটিয়া রাজত্বের সম্ভাবনা রয়েছে। রিসার্চ ইন মোশন (আরআইএম) জনপ্রিয় হলেও প্রতিষ্ঠানটি নিজেই সমস্যার মধ্যে রয়েছে। অ্যাপল বা অ্যান্ড্রয়েডের সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতা করতে যাবে না মজিলা। বরং বিকাশমান বাজারে অবস্থান তৈরি করাই হবে এর অন্যতম উদ্দেশ্য। ফায়ারফক্স ওএসচালিত স্মার্টফোন বাজারে আসতে এখনো যথেষ্ট সময় বাকি। আশা করা হচ্ছে, আগামী বছরের শুরুতে ব্রাজিলে পাওয়া যাবে ফায়ারফক্স স্মার্টফোন।