
সোমবার ● ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » আইসিটি খাত সংস্কারে খসড়া রোডম্যাপ প্রস্তুত
আইসিটি খাত সংস্কারে খসড়া রোডম্যাপ প্রস্তুত
দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাত সংস্কারের লক্ষ্যে সরকারের আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে ছয় বছর মেয়াদি একটি রোডম্যাপের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। খসড়ার শিরোনাম: ‘ন্যাশনাল ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন স্ট্র্যাটেজি’। খসড়ায় ২০২৫ থেকে ২০৩০ সাল মেয়াদ ধরে আইসিটি খাত সংস্কারের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
খসড়ায় ১০টি পদক্ষেপের উল্লেখ আছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সরকারি হস্তক্ষেপমুক্ত স্বাধীন উপাত্ত সুরক্ষা বোর্ড গঠন, ৮০ লাখ দক্ষ জনবল তৈরি, ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় অর্জন, অসম চুক্তি সংশোধন, প্রকল্পগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন, আইসিটি খাত –সম্পর্কিত নীতি বাস্তবায়ন।
খসড়াটি সম্পাদনা করেছেন আইসিটি বিভাগের পলিসি এডভাইজার (সমন্বয় ও সংস্কার) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। খসড়াটি বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য পাঠানো হবে। অংশীজনদের সঙ্গে আগামী দুই মাস খসড়াটি নিয়ে আলোচনা হবে। পরে জনসাধারণের মতামতের জন্য তা উন্মুক্ত করা হবে। চলতি বছরের মাঝামাঝি স্ট্র্যাটেজি চূড়ান্ত হতে পারে।
খসড়া রোডম্যাপে যেসব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে আছে- আন্তপরিচালনাযোগ্য ডিজিটাল অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা, সাইবার নিরাপত্তা ও ডেটা গভর্ন্যান্স শক্তিশালীকরণ, কার্যকর সেবা প্রদানের জন্য আইসিটি বিভাগের সংস্কার, নাগরিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ডিজিটাল পরিষেবা সম্প্রসারণ, একটি সমৃদ্ধ ডিজিটাল অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা, অন্তত ৮০ লাখ দক্ষ আইসিটি জনবল গড়ে তোলা, ২০২৭ সালের মধ্যে ২০ হাজার ও ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ হাজার সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ গড়ে তোলা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পোশাক খাতের শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানো। সরকার, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ মুক্ত ডেটা গভর্ন্যান্স নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্টের অধীন একটি স্বাধীন উপাত্ত ও এআই কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা। আইনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ ও সুশাসন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেসকো) মডেল অনুসরণ করা।
খসড়া অনুযায়ী, প্রথম ধাপের (২০২৫-২০২৬) অগ্রাধিকারে আছে ২০২৬ সালের মধ্যে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ডেটা আদান-প্রদানে বাংলাদেশ জাতীয় ডিজিটাল আর্কিটেকচার (বিএনডিএ) চালু করা। একটি জাতীয় ডেটা এক্সচেঞ্জ তৈরি করা। ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করা। জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা টাস্কফোর্স তৈরি করা। সরকারের ই-সেবাকে আরও ত্বরান্বিত করা। ডিজিটাল অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করা, যেখানে ইউনিভার্সাল পেমেন্ট গেটওয়ে চালু হবে।
দ্বিতীয় ধাপের (২০২৭-২০২৮) অগ্রাধিকারে আছে ডিজিটাল অবকাঠামোগত উন্নয়ন। অর্থাৎ পুরোপুরিভাবে ফাইভ-জি প্রযুক্তি ও ফাইবার অপটিক ব্রডব্যান্ড চালু। জাতীয় ক্লাউডনীতিসহ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক পরিচয় যাচাই। সাইবার নিরাপত্তা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক নীতি প্রণয়ন।
তৃতীয় ধাপের (২০২৯-২০৩০) অগ্রাধিকারে আছে পরিপূর্ণ ডিজিটাল অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার প্রতিষ্ঠা। যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের হাব হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়টি।
খসড়া অনুযায়ী, সংস্কার প্রক্রিয়া ন্যাশনাল ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন টাস্কফোর্সের তত্ত্বাবধানে হবে, যা আইসিটি বিভাগ বাস্তবায়ন করবে। কারিগরি সহায়তা দেবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোও এই প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করবে। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবে। এছাড়া উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো অর্থসহ বিভিন্ন সহযোগিতা দেবে।
সংস্কারের অংশ হিসেবে আইসিটি বিভাগের কিছু উদ্যোগের কথা আছে খসড়ায়। এর মধ্যে আছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সহায়তায় তৈরি আইসিটি ‘মাস্টারপ্ল্যান’ (মহাপরিকল্পনা) এর ওপর অংশীজন বৈঠক।
খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, অপটিক্যাল ফাইবার ও নেটওয়ার্ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ২০১৭ সাল থেকে সামিট কমিউনিকেশনস ও ফাইবার অ্যাট হোম নামের দুটি প্রতিষ্ঠান বিসিসির ফাইবার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু এই নেটওয়ার্কের ডিজিটাল মানচিত্র প্রতিষ্ঠান দুটি দেয়নি। এছাড়া বিসিসির সঙ্গে প্রতিষ্ঠান দুটির ৯০: ১০ হারে অসম রাজস্ব ভাগাভাগির চুক্তি ছিল। এসব জায়গায় সংস্কার হবে।
ডেটা সেন্টার সম্প্রসারণ ও সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা আছে খসড়ায়। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি পুনর্গঠন করা হবে। বিগত সরকার ওরাকল নামের কোম্পানির সঙ্গে ১৮ মিলিয়ন ডলারের যে চুক্তি করেছিল, তা জাতীয় স্বার্থবিরোধী। এই চুক্তি সংশোধন করা হবে।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত সফটওয়্যার পার্কগুলোর ট্রেনিং সেন্টার চালু করতে ব্র্যাক ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে চুক্তির কাজ চলছে বলে খসড়ায় উল্লেখ আছে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, বিসিসি, আইসিটি অধিদপ্তর, এটুআই (এজেন্সি টু ইনোভেট) পুনর্গঠন ও আইসিটি বিভাগের প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। আইসিটি খাতের দুর্নীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য একটি কমিটি কাজ করছে।
আইসিটি বিভাগের বেশ কিছু উদ্যোগের পুনরাবৃত্তি রয়েছে উল্লেখ করে খসড়ায় বলা হয়েছে, এগুলো নতুন করে বিবেচনায় আসবে। সে হিসেবে আইডিয়া প্রকল্প ও স্টার্টআপ বাংলাদেশ এক হয়ে যাবে। জাতীয় ডেটা সেন্টার ও বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি এক হবে। এছাড়া আইসিটি বিভাগের অধীন সংস্থাগুলোর মধ্যে একই ধরনের ভিন্ন প্রকল্প থাকলে সেগুলো একত্র করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।