মঙ্গলবার ● ৩১ জুলাই ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » কেমন আছে নকিয়া?
কেমন আছে নকিয়া?
।। ফাহমিদা ফেরদৌস ।।
ফিনিশ প্রতিষ্ঠান নকিয়ার যাত্রা ১৮৬৫ সালে। কোম্পানিটি ১৯৭০-এর দশকে তৈরি করে প্রথম নেটওয়ার্কিং ডিভাইস নকিয়া ডিএক্স ২০০। সাড়া জাগাতে পারেনি সেটি। ১৯৯২ সালে বিক্রির হিড়িক পড়ে যায় প্রথম জিএসএম সেলফোন নকিয়া ১০১১ বাজারে এলে। তবে প্রতিষ্ঠানটি অভূতপূর্ব সাড়া পায় নকিয়া ১১০০ মডেলে। এটি দ্বিতীয় প্রজন্মের অনেক সেলফোন ব্যবহারকারীরেই প্রথম ফোনোসেট; বিশ্বে সর্বাধিক বিক্রীত সেলফোনের মডেলও নাকি এ ১১০০। মডেলটির সঙ্গে সঙ্গে সেলফোনের বাজারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে নকিয়া। এখনো প্রায় লক্ষাধিক মানুষ কাজ করছে এতে। তারা ফোনসেট বিক্রি করছে প্রায় ১৫০টি দেশে। এরই মধ্যে পরিবেশদূষণ রোধে ইতিবাচক ভূমিকার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও লাভ করেছে তারা; পেয়েছে এনার্জি স্টার (অনেকের মতে এটি শক্তি বা জ্বালানি দক্ষতা নির্ণয়ের সর্বোচ্চ মানদণ্ড) সার্টিফিকেট। তার পরও বিশেষত বছর দুয়েক ধরে নকিয়া তেমন সুবিধা করতে পারছে না বাজারে। কর্মী ছাঁটাই অব্যাহত রয়েছে; বন্ধ করা হয়েছে অনেক আউটলেট। নামছে হেলসিংকি, ফ্রাংকফুর্ট ও নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে নকিয়ার শেয়ারদর। স্পষ্টত নানা পদক্ষেপ নিয়েও লোকসান থামানো যাচ্ছে না। কেউ কেউ বলেন, তার কারণ প্রকৃত সমস্যার দিকে নজর দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি।
প্রথম সমস্যা হলো, ব্যবসা বেশি বড় হয়ে পড়ায় খুঁটিনাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই দৃষ্টি দিতে পারছে না নকিয়া। ১৯৯০-এর দশকে সেলফোনের বাজারে আসার পর তাদের দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল সনি-এরিকসন, সিমেন্স ও মটোরোলা। পরবর্তী সময়ে নকিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে সিমেন্সের; গড়ে তোলা হয় নকিয়া-সিমেন্স নেটওয়ার্ক নামের যৌথ উদ্যোগ। এরই মধ্যে নকিয়ার বাজার বাড়ছিল; ধীরে ধীরে কমছিল মটোরোলা ও সনি-এরিকসন সেলফোন বিক্রি। তখন স্যামসাং মোবাইল বাজারে এসেই প্রধানত বাহারি স্মার্টফোন দিয়ে এক রকম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় নকিয়ার সামনে। এদিকে দৃষ্টি দেয়ার আগেই ২০০৭ সালে বাজার মাত করে আইফোন। উচিত ছিল অ্যাপলের সঙ্গে শত্রুতায় না গিয়ে স্যামসাংয়ের বিষয়ে মনোযোগী হওয়া। তা না করে আইফোনের গায়ে দাঁত বসাতে গিয়েই প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হয় নকিয়া। অ্যাপলের বাজার বাড়তে থাকে; যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপে সংকুচিত হয় নকিয়ার বাজার। তার স্থান দখলে এগিয়ে আসে স্যামসাং।
নকিয়ার দ্বিতীয় সমস্যা, ‘বন্ধু’ মাইক্রোসফট। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে উইন্ডোজ ফোন তৈরির চুক্তি হয় ২০১১ সালে। তবে প্রায় সব বাজারেই কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে ব্যর্থ হয় নকিয়া লুমিয়া। নকিয়া মোবাইলের ওপর আগেই ছিল মাইক্রোসফটের নজর। এ ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র তত্ত্বও রয়েছে। মাইক্রোসফট নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে নকিয়াকে বিপদে ফেলে দিয়েছে, যাতে কম দামেই কেনা যায় এটিকে। এর সত্যতা জানার উপায় নেই। অবশ্য নকিয়া মোবাইল কিনতে দুবার প্রস্তাব দেয়া হয় মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে। তৃতীয় সমস্যা, নকিয়া-সিমেন্স নেটওয়ার্ক কেলেঙ্কারি।
প্রতিষ্ঠানটি নাকি ইরানের বাজারে নকিয়া মোবাইলকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিতে স্থানীয় বৃহত্তম সেলফোন অপারেটরের কাছে বিক্রি করে সিপিআই। এর সহায়তায় নজরদারি থেকে শুরু করে সেলফোন ব্যবহারকারীর তথ্যও পরিবর্তন করা সম্ভব। ঘটনাটি ফাঁস হয়ে পড়লে দ্রুত কমতে থাকে, বিশেষত নকিয়া স্মার্টফোনের বিক্রি। অনেক ক্রেতাই ভুল ধারণা পোষণ করতে থাকেন- নকিয়া কিনলেই প্রাইভেসি থাকবে না।
প্রশ্ন হলো, এমন পরিস্থিতি আদৌ কাটিয়ে উঠতে পারবে কি নকিয়া? পারলেও কেমন সময় লাগবে? অনেকে মনে করেন, দুটি পথে হূত বাজার পুনরুদ্ধার করতে পারে নকিয়া। এক. স্যামসাংয়ের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে গিয়ে। দুই. উইন্ডোজ সেলফোন দিয়ে বাজার মাত করার আশা পরিত্যাগ করে অ্যান্ড্রয়েড সেলফোন উত্পাদনের মাধ্যমে। এ জন্য সময় লাগবে কিছুটা। নকিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, ‘যেভাবেই’ হোক বছরখানেকের মধ্যেই পূর্বাবস্থায় ফিরে আসবে নকিয়া। এ প্রতিশ্রুতি পূরণ করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয় অবশ্য রয়েই গেছে।- SBB