মঙ্গলবার ● ৩১ জুলাই ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » বন্ধ থাকা পাঁচ অপারেটরের মধ্যে তিনটিকে পিএসটিএন সেবা চালুর অনুমতি
বন্ধ থাকা পাঁচ অপারেটরের মধ্যে তিনটিকে পিএসটিএন সেবা চালুর অনুমতি
প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর বিটিআরসির শর্ত পূরণ করে আবার চালু হলো পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক (পিএসটিএন) সেবা। শর্ত পূরণ করায় বন্ধ থাকা পাঁচ অপারেটরের মধ্যে তিনটিকে এ সেবা চালুর অনুমতি দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এর মধ্যে র্যাংকসটেল চলতি মাসে সেবাটি চালু করেছে। অন্য দুই অপারেটরের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলছে। আগামী মাসে বাণিজ্যিকভাবে তারা এ সেবা চালু করবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ওয়ার্ল্ডটেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাঈম চৌধুরী বলেন, অনুমতি পাওয়ার পর দ্রুত সেবাটি পুরোপুটি চালু করা হবে। বর্তমানে ওয়ার্ল্ডটেলের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলছে। দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে এ সেবা চালু সম্ভব হবে। পিএসটিএন অপারেটরদের সেবা টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের সহযোগিতা প্রয়োজন। চলতি বছরের শেষ দিকে ওয়ার্ল্ডটেলের ইন্টারনেটসেবা
চালু হবে।
২০১০ সালের মার্চে অবৈধ ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) ব্যবসার অভিযোগে বন্ধ করে দেয়া হয় পিএসটিএন পাঁচ অপারেটরের সেবা। একই বছরের ১৫ থেকে ২৩ মার্চের মধ্যে র্যাংকসটেল, ওয়ার্ল্ডটেল, পিপলসটেল, ঢাকা ফোন ও ন্যাশনাল ফোনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বিটিআরসি। তবে গত বছরই পাঁচটি শর্ত পূরণসাপেক্ষে পুনরায় সেবা চালুর অনুমতি দেয়া হয় তাদের। শর্তগুলো হলো- বকেয়া আন্তঃসংযোগ ফি পরিশোধ করা, বিটিআরসির বিরুদ্ধে করা পিএসটিএন প্রতিষ্ঠানগুলোর সব মামলা তুলে নেয়া, শর্তের বিষয়ে ভবিষ্যতে নতুন করে মামলা করা এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করা যাবে না। তবে বন্ধ থাকার সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনো ধরনের ফি দিতে হবে না।
দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর এত বছরের বিনিয়োগ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরির বিষয়টি বিবেচনায় এনে তাদের লাইসেন্স ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মামলা প্রত্যাহার ও বকেয়া পরিশোধে সম্মত হওয়ায় র্যাংকসটেল, ওয়ার্ল্ডটেল ও ন্যাশনাল ফোনকে পুনরায় সেবাটি চালুর অনুমতি দেয় বিটিআরসি। বাকি দুই অপারেটরকে এখনো অনুমতি দেয়া হয়নি বলে বিটিআরসি সূত্র জানায়। বন্ধ পাঁচ পিএসটিএন প্রতিষ্ঠানে মোট ১ হাজার ৫০০ কর্মী ছিলেন বলে প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্রে জানা যায়। বন্ধ হওয়ার পর প্রতি মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
জানা গেছে, কার্যক্রম বন্ধের সময় এসব প্রতিষ্ঠানের মোট গ্রাহক ছিল প্রায় সাড়ে ৭ লাখ। পরে একই বছরের মে মাসে প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স বাতিল করে কমিশন। বন্ধ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ওয়ার্ল্ডটেল ছাড়া বাকি চারটি দেশব্যাপী সেবাদানের লাইসেন্সপ্রাপ্ত। আর ওয়ার্ল্ডটেল শুধু সেন্ট্রাল জোনের মধ্যে এ সেবাদানের লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান।
চলতি মাসে পুনরায় সেবা চালু করেছে র্যাংকসটেল। বন্ধ হওয়ার আগে প্রায় ৩ লাখ গ্রাহক নিয়ে র্যাংকসটেল দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ ফিক্সড ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ছিল। আর নতুন করে চালুর পর এরই মধ্যে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ প্রসঙ্গে র্যাংকসটেলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা একে শামসুদ্দিন বলেন, গত বছরের জুলাইয়ে সেবাটি চালুর অনুমতি পেলেও যন্ত্রপাতি আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কিছুটা সময় লেগেছে। এ ছাড়া সেলফোন অপারেটরদের সঙ্গে আন্তঃসংযোগে নতুন করে চুক্তি করতে হয়েছে। এ জন্য বাণিজ্যিকভাবে আবার সেবা চালু করতে অনুমতি পাওয়ার পর প্রায় এক বছর সময় লেগেছে। আগামী মাসে প্রতিষ্ঠানটি ইন্টারনেট সেবা চালু করবে।
তিনি বলেন, পিএসটিএন কল ট্যারিফের ন্যূনতম সীমা কমিয়ে আনায় সুস্থ প্রতিযোগিতার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে গ্রাহক আকর্ষণের সম্ভাবনা বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, সেলফোনের কারণে ফিক্সড ফোনের ব্যবহার কমে এলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনো জনপ্রিয় পিএসটিএন অপারেটরদের সেবা। মূলত কম খরচে ভয়েস কল করার সুবিধা ও ডাটা কানেকটিভিটি সেবার মাধ্যমে এ জনপ্রিয়তা টিকিয়ে রেখেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এর পাশাপাশি পিএসটিএনের মাধ্যমে জনসাধারণের ফোন করার সুবিধা (পিসিও) দেয়া হয়ে থাকে।
পিএসটিএন প্রতিষ্ঠানগুলো তারবিহীন ফিক্সড ফোন সেবা দিচ্ছে। তবে এ সংযোগ সীমিত পরিসরে স্থানান্তরযোগ্য হলেও সেলফোন অপারেটরদের মতো নয়। পিএসটিএন অপারেটরদের বেশির ভাগই সেবাদানের ক্ষেত্রে সিডিএমএ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। শুধু ওয়ার্ল্ডটেল জিএসএম প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ সেবা দিচ্ছে। দেশব্যাপী সেবাদানের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২ দশমিক ৫ মেগাহার্টজ করে তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে পিএসটিএন লাইসেন্স দেয়া হয়েছে মোট ১৩টি। আঞ্চলিক ও দেশব্যাপী সেবাদানের জন্য দুই ধরনের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এ খাতে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। আঞ্চলিক পর্যায়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে পিএসটিএন সেবাটি চালু রয়েছে।