সর্বশেষ সংবাদ
ঢাকা, জানুয়ারী ১১, ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১
ICT NEWS (আইসিটি নিউজ) | Online Newspaper of Bangladesh |
শনিবার ● ১১ জানুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি করেছে ভুক্তভোগীরা
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি করেছে ভুক্তভোগীরা
২১ বার পঠিত
শনিবার ● ১১ জানুয়ারী ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি করেছে ভুক্তভোগীরা

---সদ্য অনুমোদন পাওয়া সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪ (খসড়া) এর বিতর্কিত ধারাগুলোর অপপ্রয়োগের আশঙ্কা জানাতে ১১ জানুয়ারি রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ভয়েস ফর রিফর্ম ও ডিএসএ ভিক্টিম নেটওয়ার্কের যৌথ আয়োজনে একটি আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ভয়েস ফর রিফর্ম এর সহ সমন্বয়ক ফাহিম মাশরুরের সঞ্চালনা ও মানবাধিকার কর্মী শহিদুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গত সরকারের আমলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নির্যাতনের শিকার বেশ কয়েকজন ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ভয়েস ফর রিফর্ম এর সহ সমন্বয়ক শিমু নাসের নতুন ডিজিটাল সিকিউরিটি অধ্যাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ ধারাগুলো উপস্থাপন করেন এবং সেগুলো কিভাবে বাকস্বাধীনতা রোধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে পারে তা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে অন্যায় ভাবে গ্রেপ্তারকৃত চার জন ব্যক্তি বক্তব্য রাখেন। ইশরাত জাহান রেইলি, তরুণী যিনি ছাত্র অবস্থায় ২ বছর ৭ মাস কোন অপরাধ করা ছাড়াই সাজা ভোগ করেছেন। তিনি তার মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। গোলাম মাহফুজ জোয়ার্দার ও মো: আল আমিন, তাদের বিনা অপরাধে নিজেদের সাজা ভোগ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তারা জানান, যে জামিনের আবেদন কোন কারন ছাড়াই বেশ কয়েকবার খারিজ করা হয়েছে। দিদারুল ভূঁইয়া, যিনি নিহত মোস্তাক আহমেদ ও কার্টুনিস্ট কিশোরের সাথে একই মামলায় কারাভোগ করেছেন, অভিযোগ করেন যে ডিএসএ মামলার কোন আসামীদের মামলা উঠানো না  হলেও সরকারের একজন উপদেষ্টার মামলা আগস্ট মাসে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। তিনি অবিলম্বে ডিএসএ ও আইসিটি অ্যাক্টের ( ৫৭ ধারা ) অধীনে সকল মামলা উঠিয়ে নেয়ার দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত মিডিয়া সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান সাংবাদিক কামাল আহমেদ বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদে বেশ কয়েকজন মানবাধিকার কর্মী থাকা সত্ত্বেও সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের মতো একটি কালো আইন তৈরি হতে যাচ্ছ।

উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা বলেন, পূর্বোক্ত আইনটি অপপ্রয়োগ করে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা কার্যত স্তব্ধ করে ভীতি ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শাসন কায়েম করতে সফল হয়েছিল।

তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আশা ছিলো, গণতন্ত্র ও মানবাধিকের সাথে সাংঘর্ষিক এই কালাকানুন সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে তার পরিবর্তে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবিক মর্যাদা এবং নাগরিক অধিকার ভিত্তিক একটি জনমুখী, সুচিন্তিত, সুসংগত ও সুশাসনমূলক আইন প্রণয়ন করবে।

এই অধ্যাদেশের অন্যতম সবচেয়ে খারাপ ও আপত্তিকর অংশ ধারা ৩৫ এবং ৩৬, যেটা অনুযায়ী পুলিশ বিনা পরোয়ানায় যে কারো ফোন ল্যাপটপ বা যেকোনো ডিভাইস জব্দ ও তল্লাশি করতে পারবে এবং ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবে। পুলিশ কর্মকর্তার “বিশ্বাস করার কারণ থাকলে”-ই তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের অনুমতি তাদের দেয়া হয়েছে এই দুই ধারায়।

যে বাংলাদেশের পুলিশের দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার সর্বজনবিদিত, যেখানে জুলাইয়ের পর পুলিশের জবাবদিহিতা বাড়ানোর উপর জোর দেয়া উচিত ছিলো, তা না করে পুলিশের হাতে জন হয়রানির একটু নতুন হাতিয়ার তুলে দেয়া হচ্ছে। পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি এবং গ্রেপ্তার কোনো স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কাম্য হতে পারে না। এটি সরাসরি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার লঙ্ঘন এবং মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক।

ধারা ৮-এ বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি মনে করে কোনো তথ্য বা উপাত্ত দেশের সংহতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধ ক্ষুন্ন করতে পারে তাহলে তারা মহাপরিচালকের অনুমতি সাপেক্ষে এই তথ্য প্রচার ব্লক করে দিতে পারে। সাংবাদিকতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এই ধারা অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়া হচ্ছে। যদি কোনো ব্যক্তি বা সংবাদ মাধ্যম সরকার বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দুষ্কর্ম তুলে ধরার সাহস করে তাহলে তাকে অনায়াসে এই আইনের আওতায় নিয়ে আসা যাবে।

অধ্যাদেশ অনুসারে, রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাষ্ট্রের চাকরিরত কর্মকর্তারা দেশের সংহতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ ইত্যাদির সংজ্ঞা নির্ধারণ করবেন এবং তা লঙ্ঘন হয়েছে কি না সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত করার পর বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে এমন বেপরোয়া কর্তৃত্ববাদী আইন কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

ধারা ২৫ এবং ২৬-এ ব্যক্তিগত হয়রানি, অপমান, ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা বলা হয়েছে যা অত্যন্ত আপেক্ষিক একটি বিষয়। এই ধারার আওতায় কাউকে হয়রানির উদ্দেশে খুব সহজেই কারও বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব।

ক্ষমতাসীন সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং জবাবদিহীতার সম্মুখীন করতে কার্টুন এবং প্যারোডির ব্যবহার হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। কিন্তু গত ১৫ বছরে সরকারকে সমালোচনা করে কোনো কার্টুন প্রকাশ করা হলে তার সাথে জড়িতদের দুর্বিষহ অত্যাচার করা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মিম, দেয়ালচিত্র এবং কার্টুন ছিলো আমাদের অন্যতম শৈল্পিক হাতিয়ার। অথচ ধারা ২৫-এ আরও বলা হয়েছে কাউকে হেয় প্রতিপন্ন বা অপমান করার উদ্দেশে তৈরী স্থির চিত্র, ভিডিও, গ্রাফিক্স ইত্যাদি যার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই, এমন উপাত্ত প্রকাশ বা প্রচার আইনত দণ্ডনীয়। কিন্তু এখানে শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য বলতে কি বুঝানো হচ্ছে তা বলা হয়নি। অপমান বা হেয় করার ব্যাপারটিও সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। এর মাধ্যমে শুধু শিল্পিদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে না, সৃজনশীলতার অধিকারও কেড়ে নেয়া হচ্ছে। একটি চিত্রের শৈল্পিক মূল্য আছে কি নেই তা পুলিশ নির্ধারণ করতে পারে না।

সভাপতির বক্তব্যে আলোকচিত্রশিল্পী, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী শহিদুল আলম বলেন, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে মানবাধিকার কিংবা জনগণের স্বার্থের লেন্স ব্যবহার না করে নিপীড়নের লেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে পুলিশকে ও নিরাপত্তাবাহিনীকে অনেক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে শেখ মুজিব, মেজর জিয়াউর রহমান মারা গেছেন। ক্রসফায়ার, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুম, নিপীড়ন যা যা হওয়ার সবই তারা করেছে। ২০২৪ সালে হেলিক্টপ্টার ও মাটি থেকে গুলি করে কিংবা পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে তাদের ক্ষমতায়ন করার জন্য আমরা এই আইন বানাচ্ছি। সাংবাদিকতাকেও যদি ক্রিমিনালাইজ করা হয় তখন মিডিয়া বলে কিছু থাকবে না। পিআর হাউজ হয়ে যাবে। যা ইতিমধ্যেই হয়েছে। আমাদের ডিভাইস যেভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেভাবে ফেরত দেয়া হয় কিনা সেই ফরেনসিকও করা হয় না।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তাদের অনেকেই বলেন জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিভিন্ন মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট কনভেনশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। এই আইনের বেশ কিছু ধারা সেগুলোর সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।

এই নতুন অধ্যাদেশের খসড়া অবিলম্বে বাতিল করে সকলের মতামতের ওপর ভিত্তি করে শুধুমাত্র সাইবার অপরাধ গুলো থেকে নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য নতুন আইন কাঠামো তৈরি করার দাবি জানানো হয়েছে।



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি করেছে ভুক্তভোগীরা
ভিভো এক্স২০০ এর নজর কাড়া পাঁচ দিক
উবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২০২৫ এর অফিসিয়াল মোবিলিটি পার্টনার
ইনফিনিক্স নোট ৪০এস এর সাথে বিনামূল্যে ওয়্যারলেস চার্জার
রিয়েলমি সি৭৫ এর কার্যক্ষমতা দেখলো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা
বাজারে এআই সুবিধাযুক্ত স্যামসাংয়ের ‘নিও কিউএলইডি ৮কে’ টিভি
ফুডপ্যান্ডা ও সিপি ফাইভ স্টারের মধ্যে চুক্তি
এআই-ভিত্তিক চ্যাট ইঞ্জিন আনল বাংলালিংক
রিয়াদে ইউএনসিসিডি ‘সিওপি-১৬’ সম্মেলনে প্রিয়শপ
সর্বোচ্চ পারফর্মেন্সের মাইলফলক অর্জন করেছে ক্যাসপারস্কি