রবিবার ● ১০ নভেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » শুরু থেকে পুরোটা সময় ই-ক্যাব ছিলো ব্যবসায়ী নেতৃত্বশূন্য
শুরু থেকে পুরোটা সময় ই-ক্যাব ছিলো ব্যবসায়ী নেতৃত্বশূন্য
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা), ফাউন্ডার কিনলে ডটকম
ছাত্র জনতার বিপ্লবের পর ৫ আগস্ট থেকে আজ তিন মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হয়েছে এবং সময়ের পরিক্রমায় ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন এই পুরো সময়টাই ব্যবসায়ী নেতৃত্বশূন্য। অভিভাবকহীন এই সময়গুলোতে বিপ্লবের সময়ের সেই ক্ষতি কতটুকু পুষিয়ে উঠতে পেরেছে ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা? বিগত তিন মাসে ব্যবসার সার্বিক অবস্থা কি ছিল? কতদূর এগিয়েছে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি? অ্যাসোসিয়েশন ব্যবসায়ীদের স্বার্থে নতুন এই সরকারের সাথে কিভাবেই বা কাজ করছে বা ভবিষ্যতে করবে? এসব বিষয় এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ই-কমার্স খাতে।
বাংলাদেশের ই-কমার্স ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে শুরু হলেও নেতৃত্ব কখনোই ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের হাতে ছিল না। এমনকি ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর প্রতিষ্ঠাতারাও মেইনস্টিম ই-কমার্স ব্যবসা এর সাথে কখনোই তেমন একটা জড়িত ছিলেন না। আহবায়ক কমিটিসহ যে পাঁচটি কমিটি গঠিত হয় গত দশ বছরে, তার (৫*৯) ৪৫ জন ইসি মেম্বারর মধ্যে হয়তো পাঁচজনকেও পাওয়া যাবেনা যারা মেইনস্টিম ই-কমার্স করেন।
ই-ক্যাবের মেম্বারশিপের মধ্যে ৯৫% এমএসএমই, এসএমই, ৪℅ মাঝারি, ১% বড় উদ্যোক্তা। কিন্তু আবার এই ১% এর ৯৯% ই বিদেশি অথবা বিদেশি ফান্ডেড কোম্পানি। পলিসি মেকিং, সভা, সেমিনার, নিউজ বা নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে তারাই থাকেন সবসময়। এখানে দেশীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অবস্থান বা সংখ্যা পরিমাণ বেশি হলেও, সবাই একরকমভাবে ক্ষুদ্র অংশের কাছে এক প্রকার জিম্মি। এ সমস্ত বিদেশী ফান্ডেড বা বিদেশি কোম্পানিগুলো কখনো দেশীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রতিবন্ধকতা, অসুবিধা, তাদের জন্য এপ্রোপিয়েট পলিসি, তাদেরকে ফ্যাসিলিটেইট করার উপায়, কিভাবে বিভিন্নভাবে ফান্ড, ম্যান্টরশীপ দিয়ে তাদেরকে আরো সাসটেইননেবল করা যায় সে বিষয়ে কখনোই সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি।
ই-কমার্সের জন্য বাংলাদেশ হলো বিশে^র ৩১তম লার্জেস্ট মার্কেট। যার আর্থিক মার্কেট সাইজ আনুমানিক প্রায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা। আমাদের প্রায় ১২ কোটির মত মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এবং প্রায় ১০ কোটি ফেসবুক ইউজার আছে, যার মধ্যে ১০% ইউজার মানে প্রায় ১ কোটি ইউজার ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সেবা নিয়ে থাকেন। যার মধ্যে ১৫ লাখ মানুষ ই-কমার্সে অর্ডার করেন প্রায় প্রতিদিন। দৈনিক প্রায় ৮ লাখের অধিক অর্ডার হয়, এবং প্রতি অর্ডারে বাস্কেট সাইজ ১২৫০ থেকে ১৪৫০ এর মত, এবং দৈনিক ই-কমার্স এর ট্রানজেকশন হয় প্রায় ১০০ কোটি টাকার মতো। ই-ক্যাবের প্রায় ২৭০০ মেম্বার সহ আনুমানিক প্রায় সাড়ে তিন লাখ ফেসবুক পেইজ আছে যারা এফ কমার্স এবং ইনস্টাগ্রামে বিজনেস করে থাকেন। তিন লাখ ফেসবুক পেইজ যারা বিজনেস করেন তাদের ৯৭% এসএমই বা ছোট উদ্যোক্তা।
বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য ই-কমার্স ব্যবসায়ী বা ফেসবুক উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের বেশ কিছু দাবি আছে, যেগুলো ইতোমধ্যে ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন মহলেও অবহিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো দাবিগুলো বিবেচনা করলে এ খাতের উন্নতি হবে বলে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন।
১. ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা দুই পক্ষের জন্য স্বল্পমূল্যে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা।
২. ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসাকে শিল্প ঘোষণা করা।
৩. ট্রেড লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসাকে সংযুক্ত করা।
৪. আগামী ১২ মাসের জন্য ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের ব্যবসা সংক্রান্ত এবং ব্যক্তিগত সমস্ত লোনের ইন্টারেস্ট মওকুফ করা অথবা একেবারে নমিনাল পর্যায়ে নিয়ে আসা। লোনের ইনস্টলমেন্টগুলোকে শুধুমাত্র মূল টাকাগুলো নিয়ে লোনকে সচল রাখা। এটাকে টুয়েলভ মানথ পেমেন্ট হলিডে হিসেবে আখ্যা দিতে পারি।
৫. ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জামানতবিহীন লোনের ব্যবস্থা করা। চিরাচরিত অফলাইন ব্যবসার মতো ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের অনেক সময় মেশিনারি, স্টাবলিশমেন্ট থাকে না। এদের থাকে টেকনোলজি, গুডউইল, কাস্টমার ডাটা, কুরিয়ার ডাটা, ফেসবুক লাইক বা রিচ অথবা ওয়েবসাইটের গ্রহণযোগ্যতা। এগুলো বিবেচনা করেই লোনের ব্যবস্থা করা।
৬. চলতি অর্থ বছরে ই-কমার্স ব্যবসায়য়ীদের ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক সমস্ত ভ্যাট ট্যাক্স মওকুফ করা।
৭. ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট ট্যাক্স মওকুফ করা। ফেসবুক অ্যাড এর জন্য প্রদত্ত ১৫% ভ্যাট সহ।
৮. ই-কমার্স ব্যবসাহীদের বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে এসএমই উদ্যোক্তা হিসেবে সরাসরি আর্থিক প্রণোদনের ব্যবস্থা করা।
৯. ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত কার্ড, অনলাইন ট্রানজেকশন, এমএফএস এর ট্রানজেকশনগুলো আগামী ৬ থেকে এক বছর পর্যন্ত চার্জ মওকুফ করা ।
১০. চলমান বছরের ট্রেড লাইসেন্স রিনিউর ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র রিনিউয়াল ফি নেয়া, উৎসে কর কর্তন বাদ দিয়ে।
১১. সেন্ট্রাল লজিস্টিক ট্রাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে সবার সেলস, ব্যবসার গ্রোথ এবং কোম্পানি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়ার ব্যবস্থা করা।
১২. পৃথিবীর যেসব দেশে ই-কমার্স গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে সেখানেই ই কমার্স ক্যাশলেস হয়েছে, বাংলাদেশে এখনো ক্যাশ অন ডেলিভারিতে হয়। কিন্তু ক্যাশলেস করার জন্য বাংলাদেশের এমএসএস কোম্পানিগুলোর মাধ্যমেই লেনদেন বেশি করাতে হলে ই-কমার্সের ক্ষেত্রে এমএমএস কোম্পানির সার্ভিস চার্জ ০.৫ টাকাতে নামিয়ে আনা এবং পেমেন্টগেটওয়ের চার্জও ০.৬ টাকার মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করা।
১৩. ফেসবুক অ্যাড এর ক্ষেত্রে অ্যাড লিমিট প্রত্যেকটা ই-কমার্স ব্যবসায়ীর জন্য বাৎসরিক মিনিমাম ৩০০০০ ডলার করে দেয়া উচিত।
১৪. দেশীয় পণ্য দেশের বাইরে প্রচার-প্রসারের জন্য ক্রস বর্ডার ই-কমার্সকে উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত, সেক্ষেত্রে কুরিয়ার চার্জ ভ্যাট ট্যাক্স এর বিষয়গুলোকে ক্রস বর্ডারের জন্য শিথিল করা যেতে পারে। বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল পোস্টাল সার্ভিসকে আরো বেশি যুগোপযোগী এবং গ্রহণযোগ্য করে ক্রস বর্ডারকে উৎসাহিত করা উচিত।
১৫. ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া এবং ব্যবসা পুনরায় নতুন উদ্যমে চালু করতে সহায়তা করার জন্য সরকারি অনুদান বা সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা।
১৬. ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়িক অবকাঠামো পুনর্র্নিমাণে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা।
১৭. ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা সহজীকরণ করা।
১৮. ই-কমার্সের গুরুত্ব এবং এর অবদান সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
১৯. ই-কমার্স খাতের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা।