মঙ্গলবার ● ২৪ জুলাই ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » ১১ প্রকল্পের সাতটিই আটকে আছে বিদেশী সহায়তার অপেক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাজে অগ্রগতি নেই
১১ প্রকল্পের সাতটিই আটকে আছে বিদেশী সহায়তার অপেক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাজে অগ্রগতি নেই
নাজনীন আখতার ॥ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নতুন ১১টি প্রকল্পের মধ্যে ৭টিই আটকে রয়েছে বিদেশী সহায়তা ও অনুমোদনের অপেক্ষায়। আশ্বাস দিলেও এখনও ওইসব প্রকল্পে পুরোপুরি অর্থ দেয়ার ব্যাপারে এগিয়ে আসেনি দাতা সংস্থা ও দেশগুলো। প্রকল্পগুলোর মধ্যে কয়েকটির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছর। কোন প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ সে সব প্রকল্প নেয়া হলেও অর্থায়নের বিষয়টি সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হওয়ায় কোন কোনটির ক্ষেত্রে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। কোনটির ক্ষেত্রে কাজ অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, নবগঠিত এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে আনায় তিনি মন খারাপ করে থাকেন। শুরুর দিকে এ মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে তাঁকে বেশ অমনোযোগী মনে হতো। ফলে প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রেও তেমন অগ্রগতি হয়নি।
উল্লেখ্য, গত বছর ২৮ এপ্রিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ গঠন সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি হয়। পরে ৪ ডিসেম্বর এটিকে মন্ত্রণালয়ে রূপ দেয়া হয়। এর আগে এটি বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি বিভাগ ছিল। নতুন এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয় সৈয়দ আবুল হোসেনকে। এর আগে তিনি যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অনিয়মের অভিযোগ, প্রখ্যাত নির্মাতা তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মনীর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া এবং দেশের অধিকাংশ রাস্তার করুণ দশার কারণে তীব্র সমালোচনার মুখে তাঁকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৩০ মে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রকল্পওয়ারী তথ্য উপস্থাপন করে। পৃথক মন্ত্রণালয় হওয়ার আগেই বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্পগুলো নেয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। ৭টি আটকে আছে দাতা সংস্থার কাছে।
সূত্র মতে, ২৮১ কোটি ৪৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গবর্নমেন্ট (বাংলা গবর্নমেন্ট) প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে ২০১০-এর এপ্রিল থেকে ২০১৪ সালের জুন মাস মেয়াদে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৪টি জেলা ও প্রতিটি জেলার একটি করে উপজেলায় নেটওয়ার্ক স্থাপন ও প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয়ের মধ্যে প্রকল্প সাহায্য রয়েছে ২১৪ কোটি ৪০ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে দাতা সংস্থা এখন পর্যন্ত পুরো অনুমোদন দেয়নি। এদিকে ২০১১-২০১২ অর্থবছরে আরএডিপি প্রকল্পটির জন্য মাত্র ৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
দাতা সংস্থার অনুমোদন প্রাপ্তিতে বিলম্ব হচ্ছে এমন আরেকটি প্রকল্প হলো বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ভবনের ৫ম থেকে একাদশ তলা পর্যন্ত উর্ধমুখী সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নেয়া ‘অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বিসিসি শক্তিশালীকরণ প্রকল্প’। ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদের এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ৪ হাজার টাকা।
এস্টাবলিশমেন্ট অব সাসেক ইনফরমেশন হাইওয়ে (বাংলাদেশ পার্ট) প্রকল্পের ক্ষেত্রেও দাতা সংস্থার অনুমোদন প্রাপ্তিতে বিলম্ব হচ্ছে বলে প্রকল্পওয়ারী তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। রিজিওনাল নেটওয়ার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে নেয়া এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ২১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
দুর্গম এলাকায় ১০০টি ইউআইএসসি স্থাপনের লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে এমপাওয়ারিং রুরাল কমিউনিটিস-রিচিং দ্য আনরিচড ইউনিয়ন ইনফরমেশন এ্যান্ড সার্ভিস সেন্টার (ইউআইএসসি) প্রকল্প। অনুমোদিত এ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৪৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। তবে প্রকল্পের মূল চুক্তি এখনও দাতা সংস্থা অনুমোদন দেয়নি। ২০১৩ সালের জুন মাসে প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হবে।
এ ছাড়া প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে এমন কয়েকটি প্রকল্পের ক্ষেত্রেও অর্থায়নের বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হয়নি। এর মধ্যে প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে নেয়া লিভারেজিং ইনফরমেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজিস (আইসিটি) ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড গবর্ন্যান্স প্রকল্প অন্যতম একটি। ৫ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০১১ সালের নবেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৫০৯ কোটি ৫৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন সংক্রান্ত সম্মতির অপেক্ষায় আছে।
ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অন আইটিইই ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ শীর্ষক কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের ক্ষেত্রে জাপান সরকারের সঙ্গে অথার্য়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
আর অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে নেয়া সাপোর্ট টু ডেভেলপমেন্ট অব কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক প্রকল্পও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন সংক্রান্ত সম্মতির অপেক্ষায় আটকে রয়েছে। ২০১১ সালের আগস্ট থেকে ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪৫ কোটি ২৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা।
এ ছাড়া এস্টাবলিশমেন্ট অব আইটি পার্ক/এসটিপি এ্যাট যশোর এবং চীনা সহায়তায় নেয়া ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গবর্নমেন্ট (ইনফো-গবর্নমেন্ট) প্রকল্প দুটির প্রস্তাব প্রণয়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
আর ১৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ের বেসিক আইসিটি স্কিল ট্রান্সফার আপ টু উপজেলা লেভেল প্রকল্প এবং ১৮ কোটি ৯৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ের সাপোর্ট টু হাই টেক পার্ক অথরিটি টু এস্টাবলিশ হাই টেক পার্ক এ্যাট কালিয়াকৈর, গাজীপুর প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। দুটি প্রকল্পেরই নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হবে ২০১৩ সালে।