সোমবার ● ২৩ জুলাই ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো প্রায় সাড়ে ৭শ’ কোটি টাকার শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধ করেনি
মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো প্রায় সাড়ে ৭শ’ কোটি টাকার শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধ করেনি
এক বছরে চারটি মোবাইল ফোন কোম্পানি প্রায় সাড়ে ৭শ’ কোটি টাকার শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধ করেনি। এ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ঘটলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে।
রবিবার জাতীয় সংসদে সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে এনবিআরকে দোষারোপ করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। তৎকালীন চারদলীয় জোট ও সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন তাঁরাও এই কাজে গাফিলতি করেছেন বলে মন্তব্য করেছে সংসদীয় কমিটি।
কমিটির মতে, রাজস্ব আদায়ে যতটা ক্ষিপ্রতা ও আনুগত্য দেখানো উচিত এনবিআর তা পারেনি। সে সময় বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর অনুপস্থিতির কারণেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় কমিটি। পরবর্তী বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান হাজির না হলে সংসদ অবমাননার দায়ে অভিযোগ করা হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর। বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ, আব্দুস শহীদ, ড. টিআইএম ফজলে রাব্বি চৌধুরী, মুহাঃ ইমাজ উদ্দিন প্রাং, খান টিপু সুলতান এবং ফরিদা আখতার।
বৈঠকে অডিট আপত্তির তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, ২০০৬ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০০৭ সালের মার্চ পর্যন্ত টিএম ইন্টারন্যাশনাল, প্যাসিফিক বিডি টেলিকম লিমিটেড, গ্রামীণফোন লিমিটেড ও সেবা টেলিকম প্রাইভেট লিমিটেড এ চারটি প্রতিষ্ঠান সিমকার্ড/ রিমকার্ডের বিক্রির ওপর সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর পরিশোধ করেনি। এর ফলে ৭৪১ কোটি ৬১ লাখ ৫৪৩ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। আদায়যোগ্য এ অর্থ কেন আদায় হয়নি সে বিষয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়েছে কমিটি। ব্যাখ্যা দেয়ার সময় প্রয়োজনীয় দলিলপত্র ও তথ্যাদি কমিটিতে পেশ করতে বলা হয়েছে।
রাজস্ব আদায়ের এ হাল সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, এনবিআর চারটি মোবাইল ফোন কেম্পানির কাছ থেকে কর আদায় করতে পারেনি। যতটুকু ক্ষিপ্রতা ও আনুগত্যের সঙ্গে কাজ করার কথা তারা সেটা করেনি। তিনি বলেন, এনবিআর বলেছে, উচ্চ আদালতের একটি আদেশের কারণে এই কর আদায়ের প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। কিন্তু এটা ঠিক নয়। ওই সময় করা রিটটি আপীল বিভাগ স্থগিত করে দেয়। ট্যারিফ মূল্যের আদেশটি বাতিল করা হয়নি। তিনি বলেন, তৎকালীন সরকারের (চারদলীয় জোট ও সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার) আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন তাঁরাও এই কাজে গাফিলতি করেছেন।
বৈঠকে ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (ভ্যাট) কার্যালয়, ঢাকা এর ওপর মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের বিশেষ অডিট রিপোর্টের আরও কয়েকটি অনুচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে কমিটি সিএজি থেকে দেয়া অনুশাসন ও অডিট আপত্তি অনুমোদন ও সমর্থন করে। অনুশাসন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে তার কারণ ব্যাখ্যা করে কমিটিকে অবহিত করার নিদের্শ দেয়া হয়।
বৈঠকে অডিট রিপোর্টের আরও তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, বিভিন্ন লিমিটেড কোম্পানি, ব্যাংকিং ও নন ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী ৫০টি প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে সেবা গ্রহণকারী কর্তৃক উৎসে মূল্য সংযোজন কর কম কর্তন বা কর্তন না করায় ২০৬ কোটি ৭ লাখ ১৬ হাজার ১০৩ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এ অর্থ ওই ৫০টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তিন মাসের মধ্যে আদায়ের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। এ রাজস্ব ক্ষতির জন্য দায়ীদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে তাঁদের জবাব আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সিএজির মাধ্যমে কমিটিকে অবহিত করার পরামর্শ দেয়া হয়।