শনিবার ● ১৭ আগস্ট ২০২৪
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » চূড়ান্ত এমএফএস লাইসেন্স ছাড়াই চলছে নগদ, ঝুঁকিতে গ্রাহকের অর্থ
চূড়ান্ত এমএফএস লাইসেন্স ছাড়াই চলছে নগদ, ঝুঁকিতে গ্রাহকের অর্থ
মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন
মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) নগদ তার কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন অনুমোদনের উপর ভর করে সেবা দিয়ে আসছে। গত ছয় বছরে মোট সাত বার অন্তর্বর্তীকালীন লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়ানো হয় নগদের, যা শেষ হচ্ছে এই সেপ্টেম্বরে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ম-কানুন এর শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় এবং নিয়ম লঙ্ঘন করায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত এমএফএস লাইসেন্স পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।
প্রাথমিক অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করা নগদকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ২০২২ সালে “এমএফএস রেগুলেশন-২০১৮”-তে পরিবর্তন আনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। মূল রেগুলেশন অনুযায়ী এমএফএস প্রতিষ্ঠান হতে হবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি।
কিন্তু, শুরু থেকেই নগদ বলে আসছে, এটি বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সেবা। পূর্বে আইনীভাবে এর সুযোগ না থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে ২০১০ সালের সংশোধিত ডাক আইনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে সেবাটি। এমন কি নগদের লোগোতে বলা হয়েছিলো, এটি ‘ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন’, যদিও লোগো থেকে সম্প্রতি ডাক বিভাগের বিষয়টি সরিয়ে ফেলেছে আলোচিত-সমালোচিত প্রতিষ্ঠানটি। সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কোন সম্পর্ক না থাকলেও নিজেদের সরকারি প্রতিষ্ঠান দাবি করে নগদ তার গ্রাহকদের সাথে শুরু থেকেই প্রতারণা আসছে বলে আলোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে।
এদিকে সাময়িক লাইসেন্স দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে আসা প্রতিষ্ঠানটির আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনার প্রাথমিক লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়। আর এ বছরের জুনে আইনি বিশেষ ছাড়ে পায় চূড়ান্ত লাইসেন্স।
তবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে লাইসেন্স নেয়ার অভিযোগ থাকায়, সরকার পরিবর্তনের পর তা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে এমএফএস প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে আসা নগদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে ‘নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি’ নামে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) লাইসেন্সও নিয়েছিলো। তবে ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার জন্য সেই লাইসেন্স কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ফেরত দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠানের এমন পরিস্থিতিতে সাময়িক এমএফএস লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে আসা এবং ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল হওয়ার খবরে প্রতিষ্ঠানটির সাড়ে আট থেকে নয় কোটি গ্রাহক তাদের অর্থের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। আবার কোটি কোটি টাকা আটকে থাকায় সঙ্কায় আছেন বহু মার্চেন্টও।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ম না মানার কারণে প্রতিষ্ঠানটি সংকটে পড়ার সম্ভাবনা থাকায় গ্রাহকদের মাঝে নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উঠিয়ে ফেলার প্রবণতাও লক্ষ করা যাচ্ছে। সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বিশেষ রাজনৈতিক সুবিধা পেয়ে আসা প্রতিষ্ঠানটি এবং তার গ্রাহকদের ভবিষ্যত কি হবে তা প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।