মঙ্গলবার ● ১৭ জুলাই ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » ইন্টারনেটে আসক্ত জার্মানির নাগরিক ক্লাউস
ইন্টারনেটে আসক্ত জার্মানির নাগরিক ক্লাউস
জার্মানির নাগরিক ক্লাউস ইন্টারনেটে আসক্ত। এটি বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে যায় যে, একসময় তিনি তার নিজস্ব অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেন। ইন্টারনেটের সঙ্গে একাকার হয়ে যান। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে প্রথম ইন্টারনেটের সংস্পর্শে আসেন তিনি। ই-মেইল ঠিকানা খোলেন, চ্যাট ও সার্ফিংয়ের সঙ্গে হাতেখড়ি হয়। সে সময় অবশ্য ব্যাপারটা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। প্রতিদিনের কোনো বিষয় ছিল না।
কিন্তু ধীরে ধীরে সমস্যা শুরু হয়। বিশেষ করে ইন্টারনেটভিত্তিক গেমগুলোর কারণে। ক্লাউস বলেন, ‘ইন্টারনেটের ফাইনাল ফ্যান্টাসির মতো ভার্চুয়াল গেমগুলো আমাকে নেশার জগতে নিয়ে আসে। এসব খেলায় একবার ডুবে গেলে আমি সময় ও জগত্-সংসার একেবারে ভুলে যেতাম।’
ক্লাউস এক সময় বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতদের অবহেলা করা শুরু করলেন। এমনকি ঘুম ও নাওয়া-খাওয়ার কথাও মনে থাকত না তার। রাতগুলো কেটে যেত ইন্টারনেটের জগতে। ঘুম থেকে উঠলেই চুম্বকের মতো টানত তাকে ইন্টারনেট।
জার্মান সরকারের নেশা-সম্পর্কিত সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে জানা গেছে, ইন্টারনেটের নেশা ক্লাউসের একার সমস্যা নয়। এ নেশা এক সামাজিক সমস্যা। জার্মানির ১৪ থেকে ৬৪ বছর বয়স্কদের মধ্যে ৫ লাখ ৬০ হাজার ইন্টারনেটে আসক্ত। এ ছাড়া ২৫ লাখের মধ্যে ইন্টারনেটের কারণে নানা সমস্যা
দেখা দিয়েছে।
মদ ও হেরোইন আসক্তদের মতো লক্ষণ দেখা দেয় ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীলদের, জানান মানসিক রোগের চিকিত্সা ও থেরাপিকেন্দ্র রাইন ইউরা ক্লিনিকের প্রধান চিকিত্সক ডা. মিখাইল বেন্ডার। ইন্টারনেটের নেশা থেকে মুক্ত করতে চাইলে তারা মাদকাসক্তদের মতোই যন্ত্রণা অনুভব করেন। অনেকেই লক্ষ করেন যে, তারা সামাজিক কাজকর্ম ও অবসর সময়ে অন্য কিছু করা থেকে বিরত থাকছেন। কিন্তু এসব বুঝেও ইন্টারনেটের নেশা থেকে বের হতে পারেন না। হারিয়ে ফেলেন নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ।
হানোফার শহরের শিশু হাসপাতালের মানসিক বিভাগের চিকিত্সক ক্রিস্টফ মোলার বলেন, অতিরিক্ত মাত্রায় ইন্টারনেট ব্যবহার করলেই যে কেউ তাতে আসক্ত, এ কথা বলা যায় না। সমস্যাটা হয় তখনই, যখন কারও ক্ষতি হয়, যেমন- স্কুল যাওয়া বা সামাজিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
ডিপ্রেশন, ভীতি ইত্যাদি মানসিক সমস্যা থেকেও অনেকে ইন্টারনেটের দিকে ঝুঁকে পড়েন। বাস্তব জীবনে সমস্যা হলে কল্পলোকে সান্ত্বনা খোঁজেন তারা। মন-মেজাজ ভালো না থাকলেও ইন্টারনেট দিয়ে তা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়।
ক্রিস্টফ মোলার জানান, এ ক্ষেত্রে উদ্বেগ জাগানোর মতো ঘটনাও ঘটে। ইন্টারনেটের ঘেরাটোপে পড়ে অনেক মা এমনকি নিজের সন্তানদেরও অবহেলা করতে থাকেন। তাই বলা যায়, প্রযুক্তির এ মাধ্যম শুধু পুরুষদেরই সমস্যা নয়।
মোলার বলেন, ‘চিকিত্সা জগতে ইন্টারনেটের নেশাকে এখন পর্যন্ত আলাদা রোগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। আমরা এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছি।’
২০০৮ সালে মাইনস ইউনিভার্সিটির মানসিক ক্লিনিকে ইন্টারনেট আসক্তদের জন্য জার্মানিতে প্রথম বহির্বিভাগীয় চিকিত্সাকেন্দ্র খোলা হয়। এরই মধ্যে অন্যান্য শহরেও এ ধরনের কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। থেরাপিতে ইন্টারনেটের সঙ্গে একটা সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তুলতে শেখানো হয় রোগীদের। এ ছাড়া নিজের শরীর সম্পর্কেও সচেতন করে তোলা হয়। প্রণোদিত করা হয় অন্য কোনো শখের বিষয় খুঁজে নিতে। থেরাপির মাধ্যমে ধীরে ধীরে কর্মজীবনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আসক্তদের।