মঙ্গলবার ● ১৪ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » লাইসেন্সবিহীন ও অনিরাপদ সফটওয়্যার ব্যবহার বন্ধের আহবান বিএসএর
লাইসেন্সবিহীন ও অনিরাপদ সফটওয়্যার ব্যবহার বন্ধের আহবান বিএসএর
সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে লাইসেন্সকৃত সফটওয়্যারের ব্যবহার বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সফটওয়্যার বিষয়ক বৈশ্বিক সংস্থা দ্য সফটওয়্যার এলায়েন্স বা বিএসএ। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিস্তৃতি সত্বেও লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যারের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। সাইবার ঝুঁকি এড়াতে লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে এখন জরুরি বলে মনে করছে সংস্থাটি।
বিএসএ-এর সিনিয়র ডিরেক্টর তরুণ সাওনি বলেন, লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যারের ব্যবহার তথ্য নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। যার ফলে সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণ, তথ্য চুরি ও ম্যালওয়্যার আক্রমণের শঙ্কা বেড়ে যায়। এসব ঘটনা গ্রাহক, অংশীদার ও সহযোগীদের বিশ্বাস ও আস্থা নষ্ট করতে পারে। এছাড়া এটি যে কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের জন্য আইনী ঝুঁকি তৈরির পাশাপাশি সুনাম ক্ষুণ্নের কারণও হতে পারে। আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যারের ব্যবহার কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন, যার ফলে যে কোন সংস্থা বা সংগঠন মামলা, জরিমানা অথবা আইনি ঝামেলার সম্মুখীন হতে পারে।
বিএসএ-এর তথ্যে উঠে এসেছে যে বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতের অনেক কোম্পানিই লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, যার মধ্যে আছে উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, খুচরা ও বড় ব্যবসা, নির্মাণ ও রিয়েল এস্টেট, ভোগ্যপণ্য, ব্যাংকিং, আর্থিক পরিষেবা এবং স্থাপত্য ও প্রকৌশলসহ অন্যান্য ক্ষেত্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার ব্যবহার করার ক্ষতিকর প্রভাবগুলো সামনে উঠে আসে যখন সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের জাতীয় ডেটা সেন্টার স্টোরেজ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, ফায়ারওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং আপডেট ইনস্টল করতে না পারার মতো একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। এই সমস্যাগুলো তৈরি হওয়ার জন্য বাইরের বিভিন্ন উৎস থেকে সরবরাহকৃত লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যারের ব্যবহারকে দায়ী করা হয়েছিল যা মূলত আইন মেনে না চলার পরিনতিকেই নির্দেশ করে।
বিএসএ-এর সিনিয়র ডিরেক্টর বলেন, ‘লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার ব্যবহারের ক্ষতি শুধু আর্থিক ক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর কারণে মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয় এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনও বাধাগ্রস্ত হয়। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সফটওয়্যার সংক্রান্ত সম্পদ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের ব্যবসা মালিক, শেয়ারহোল্ডার এবং সি-স্যুট এক্সিকিউটিভদের জন্য এটা নিশ্চিত করা জরুরী হয়ে পড়েছে যে তাদের কর্মীরা লাইসেন্সকৃত সফটওয়্যারে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন কিনা এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করছেন কিনা সে বিষয়ে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।’
বিএসএ বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ে ব্যবহৃত বৃহৎ ভলিউমের সফটওয়্যারগুলো যাতে বৈধভাবে ব্যবহার করা হয় তার জন্য বাংলাদেশের আইসিটি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সির মতো সরকারি সংস্থার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার সংক্রান্ত ঝুঁকিগুলো তুলে ধরে বলেন, লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার সাইবার হুমকির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। শুধুমাত্র ঝুঁকি কমানোর জন্য নয় বরং একটি নিরাপদ ও বিপদমুক্ত সাইবার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর/সংস্থাগুলোর উচিত বৈধ সফটওয়্যার ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেয়া। তিনি আরও বলেন, সরকার এই সমস্যা সমাধানে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা নিয়মিতই ব্যবসায়িক সংস্থাগুলোকে বৈধ সফটওয়্যার ব্যবহার ও নিয়মিত লাইসেন্স নবায়ন করার পরামর্শ দিই৷ বিএসএ-এর মতো সংস্থাগুলোর সহযোগিতা এই বিষয়ক সচেতনতা এবং বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। এসব উদ্যোগ কার্যকরভাবে সাইবার নিরাপত্তার হুমকি কমাতে ভূমিকা রাখবে।
বিএসএ’র সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে। ৩০টিরও বেশি দেশে তাদের কার্যক্রম চালু রয়েছে। বিএসএ বৈধ সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রচার এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও ডিজিটাল অর্থনীতির সমৃদ্ধির লক্ষে গৃহীত সরকারী নীতিমালা বাস্তবায়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে।