মঙ্গলবার ● ২৬ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ডিএনএ বদলানোর যুগান্তকারী ‘ক্রিসপার-কাস-নাইন’
ডিএনএ বদলানোর যুগান্তকারী ‘ক্রিসপার-কাস-নাইন’
কয়েক বছর আগে ফরাসি আণবিক জীববিজ্ঞানী এমানুয়েল শার্পঁতিয়ের একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার করেন। এক মার্কিন সতীর্থের সঙ্গে একত্রে কাজ করে শার্পঁতিয়ের আবিষ্কার করেন ব্যাকটেরিয়া কিভাবে অনুপ্রবেশকারী ভাইরাসগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। জিন নিয়ে কাজ করতে হলে যে এই স্বাভাবিক, প্রকৃতিদত্ত পদ্ধতি কাজে দিতে পারে, সেটিও তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে উপলব্ধি করেন। ক্রিসপার-কাস-নাইন হলো সেই বস্তু, যা ডিএনএর উপাদানগুলোকে অতি সহজে, দ্রুত ও নিখুঁতভাবে বদলে দিতে পারে।
মলিকিউলার বায়োলজিস্ট শার্পঁতিয়ের বলেন, ‘আমার মতে এই আবিষ্কারের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং দিকটি হলো এই যে আমরা প্রকৃতিতে খোঁজাখুঁজি করছি, প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলো বোঝার চেষ্টা করছি। শেষমেশ এমন সব পদ্ধতির খোঁজ পাওয়া যাবে, যেগুলো বায়োলজি, বায়োটেকনোলজি আর বায়োমেডিসিনে কাজে লাগানো যায়।’
এই গবেষণার ফলে ক্যান্সার বা বংশানুক্রমিক অসুখবিসুখ সারানো যেতে পারবে। কিন্তু মানুষের জিন পুলে হস্তক্ষেপ করা নৈতিক বিচারে কত দূর সম্ভব বা গ্রহণযোগ্য? উদ্ভিদসংক্রান্ত গবেষণায় কিন্তু ক্রিসপার-কাস-নাইন এরই মধ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে, যেমন ভুট্টার ফলন বাড়ানোর জন্য। এ ছাড়া সাদা মাশরুম নিয়ে কাজ করা হচ্ছে, যাতে তা ধীরে ধীরে বাদামি হয়। হয়তো এমন চিনাবাদাম মিলবে, যাতে অ্যালার্জি উৎপাদনকারক কিছু থাকবে না; অর্থাৎ প্রকৃতিকে নিয়ে খেলা করা।
এমানুয়েল শার্পঁতিয়েরের নতুন কর্মস্থান কিন্তু বার্লিনে। তিনি এখন মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট ফর ইনফেকশন বায়োলজির অধ্যক্ষ। তাঁর সঙ্গে পেটেন্টসংক্রান্ত একটি বিবাদও এসেছে বার্লিনে, গবেষণার জগতে যা খুব বিরল নয়। এ ক্ষেত্রে মার্কিন বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন যে তাঁরাই প্রথম মানবকোষের ওপর ক্রিসপার-কাস-নাইন পরীক্ষা করে দেখেছেন। শার্পঁতিয়ের তাতে বিচলিত নন। তাঁর বক্তব্য হলো, ‘কোনো ভালো আবিষ্কারের ধরনই হলো যে পেটেন্টটি একটি ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। ক্রিসপার-কাস-নাইনের ক্ষেত্রেও তাই। তবে আমি জিতব বলে আমার আস্থা আছে।’
কালে দেখা যাবে, কে জেতে আর কে হারে। আপাতত ল্যাবরেটরিটি গুছিয়ে ফেলতে হবে এবং গবেষক নিয়োগ করতে হবে। সে জন্য অর্থ থাকলেও সময় কম।
ফ্রান্সের নাগরিক এমানুয়েল শার্পঁতিয়ের এখন বিজ্ঞানজগতের এক তারকা। নানা নামিদামি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। মিডিয়াও সর্বদা তাঁর খোঁজে। মানুষজন তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলতে চায়। তা ভালো লাগলেও বড় সময় খরচ হয়। এমানুয়েল সময়টি গবেষণাতেই ব্যয় করতে চান। এখনো তাঁর অনেক পরিকল্পনা আছে। শার্পঁতিয়ের বলেন, ‘ক্রিসপার-কাস-নাইন যে রকম ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে, সে ধরনের আরেকটি আবিষ্কার করা সহজ হবে না বলে আমার ধারণা। তবে আমাদের বেশ কিছু ভালো প্রকল্প আছে, ল্যাবেও নানা ভালো কাজ চলেছে। আমার লক্ষ্য হলো গবেষণা চালিয়ে যাওয়া, তা থেকে ভবিষ্যতে আবার কোনো ব্রেকথ্রু হলেও হতে পারে। একজন বিজ্ঞানীর কাছে সেটিই তো বড় কথা।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে।