মঙ্গলবার ● ২৬ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » কর্মীদের ছাঁটাইয়ের শঙ্কা ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে
কর্মীদের ছাঁটাইয়ের শঙ্কা ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে
ভারতের অর্থনীতি থেকে ভালো খবর যেন হারিয়ে গেছে। প্রবৃদ্ধি কমছে, বিক্রি কমছে, চাহিদা কমে যাচ্ছে। এসব খবরের পাশাপাশি এবার খবর এল, ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যাপক ছাঁটাই হতে পারে। এশিয়া টাইমস-এর প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানির ইনফোসিসের সাবেক প্রধান অর্থ কর্মকর্তা টি ভি মোহনদাস পাই এশিয়া টাইমসকে বলেছেন, ৩১ মার্চ ২০২০ চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে ভারতের আইটি খাতের ৩০ থেকে ৪০ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করা হতে পারে।
চাহিদা কমে যাওয়ার পাশাপাশি এবার বাণিজ্যযুদ্ধের খড়্গ নেমে এল ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। যুক্তরাষ্ট্র এইচ-১বি ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ভারতীয় আইটি কোম্পানিগুলো ভারত থেকে কর্মী নিয়ে যেতে পারছে না। এ কারণে তারা বেশি বেতন দিয়েও মার্কিন নাগরিকদের নিয়োগ দিচ্ছে। এইচ-১বি ভিসার আওতায় এত দিন এই কোম্পানিগুলো ভারতীয় কর্মীদের নিয়োগ দিতে পারত। কিন্তু ভারতীয় কোম্পানিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই ভিসার শর্ত যত কড়াকড়িভাবে আরোপ করা হয়, মার্কিন কোম্পানির ক্ষেত্রে সেটা অতটা নয় বলে অভিযোগ আছে।
আইটি কোম্পানি ইনফোসিস ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। গত কয়েক বছরে তারা ছয়টি উদ্ভাবন কেন্দ্র স্থাপন করেছে। সফটওয়্যার রপ্তানিকারকেরা গত দুই বছরে এইচ-১বি ভিসার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়েছেন। ভারতের বৃহত্তম সফটওয়্যার রপ্তানিকারক টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস ঠিকা চুক্তির খরচ কমাতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে।
এসব কারণে ভারতের বিভিন্ন কেন্দ্রে যেসব তথ্য ও যোগাযোগকর্মী কাজ করছেন, তাঁরা বিপদে পড়ছেন। সবচেয়ে বেশি মার খাচ্ছেন মধ্যম ও উচ্চ সারির কর্মীরা। ইনফোসিস এই প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকের আর্নিং কলে (বিনিয়োগকারী, বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমের সঙ্গে কনফারেন্স কল) ছাঁটাইয়ের ব্যাপারটি কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ বলে স্বীকার করেছে। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তারা ১ দশমিক ৪ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করেছে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আরেক ভারতীয় বৃহৎ প্রতিষ্ঠান কোগনিজ্যান্টও ব্যবসায়িক কৌশলে পরিবর্তন আনছে। যেসব প্রকল্প থেকে টাকা আসার সম্ভাবনা নেই, সেসব প্রকল্পে কর্মরত কর্মীদের এত দিন তারা কোম্পানি ছাড়ার জন্য ৬০ দিন সময় দিত; এখন তাঁদের ৩৫ দিন সময় দেওয়া হচ্ছে। যে কর্মীরা অন্য প্রকল্পে গিয়ে কাজ বাঁচানোর চেষ্টা করেন, তাঁদের চাকরি হারানোর ঝুঁকি আরও বেশি বলে উল্লেখ করেছে কোগনিজ্যান্ট।
টানা কয়েক বছর কোগনিজ্যান্টের প্রবৃদ্ধির হার ছিল দুই অঙ্কের। কিন্তু এখন সেই হার এক অঙ্কে নেমে এসেছে। সে জন্য ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম এমন দক্ষ ও চটপটে কর্মী-বাহিনী তৈরির চেষ্টা করছে। আগে তারা বলেছে, আগামী দিনে তারা ১৩ হাজার কর্মী বিদায় করতে চায়। এর মধ্যে ৫ হাজার কর্মীকে নতুন দক্ষতা শেখানো হবে। যদি তাঁরা সেটা শিখতে পারেন, তাহলে টিকে যাবেন, আর না পারলে বিদায় হবেন।
এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া গতি নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।