সোমবার ● ২৫ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি বিশ্ব » টেক ও বিনোদন জায়ান্টগুলোর নতুন যুদ্ধ
টেক ও বিনোদন জায়ান্টগুলোর নতুন যুদ্ধ
সম্প্রতি আমেরিকায় ডিজনি কোম্পানি মহাআড়ম্বরে টেলিভিশন-স্ট্রিমিং সার্ভিস চালু করেছে। প্রথম দিনের শেষ নাগাদ ১ কোটি লোক এই সার্ভিস গ্রহণের চুক্তিপত্রে সই করে। এ ছিল ডিজনির সর্বোচ্চ প্রত্যাশারও বাইরে। এর সার্ভারগুলোকে সার্ভার দেয়ার জন্য হিমশিম খেতে হয়। এই সার্ভিসের বদৌলতে গ্রাহকরা ডিজনির বিশাল ক্যাটালগ থেকে স্টারওয়ার্স ও অন্যান্য যে কোন হিট ছবি দেখার সুযোগ পায়। এর জন্য মাসিক খরচ লাগে ৬৯৯ ডলার যা একটি ডিভিডিরও দামের চেয়ে কম। এমনকি সিনেমা টিকিটের খরচেরও কম।
এই সার্ভিসের দ্বারা আমেরিকা, কানাডা ও নেদারল্যান্ডসের দর্শকরা এখন বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান বিনোদনে ক্যাটালগ কাজে লাগাতে পারে। নতুন অরিজিনাল কনটেন্ট ছাড়াও তারা ¯েœা হোয়াইট থেকে শুরু করে ‘এভেঞ্জার্স : এন্ডগেম’ পর্যন্ত যে কোন কিছু দেখতে পারে। আর চলতি বছরে ডিজনি ৭১০০ কোটি ডলার দিয়ে ‘ টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফক্স’ কিনে নেয়ায় জনপ্রিয় ‘দি সিম্প সনস্’-এর ৬৬২টি এপিসোডের সবই উপভোগ করতে পারে।
চাহিদামতো দর্শকদের বিনোদন যোগাতে পারার জন্য এই স্ট্রিমিং সার্ভিস চালু করতে পারা ৯৬ বছরের পুরনো কোম্পানির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। হলিউডে এর প্রতিদ্বন্দ্বীদের মতো এই কোম্পানি চলচ্চিত্র ও টিভি শোর এক সা¤্রাজ্য গড়ে তুলেছিল যেগুলো সিনেমার পর্দায়, ব্রডকাষ্ট নেটওয়ার্ক ও কেবল চ্যানেলগুলোতে ছাড়া হতো। ডিজানির মতে এই মডেলটি ইন্টারনেটের এই যুগে আর টেকসই নয়। গত অক্টোবরে ওয়ার্নার মিডিয়ার মালিক প্রতিষ্ঠান এটিএন্ডটি এইচবিও ম্যাক্স চালু করে। এই নতুন সার্ভিসের সুবাদে দর্শকরা এইচবিওর সমস্ত প্রোগ্রাম ছাড়াও ওয়ার্নার ব্রাদার্সের লাইব্রেরিসহ অন্যান্য মূল্যাবান কনটেন্ট ও নতুন অরিজিনাল শো দেখার পূর্ব সুযোগ পায়। সিবিএস অল একসেস ও শোটাইমের মতো ছোট আকারের সার্ভিসগুলোও ইতোমধ্যে স্ট্রিমিং সার্ভিস চালু করতে উদ্যত হয়েছে। গত ১ নবেম্বর টেক জায়ান্ট এ্যাপল তার নিজস্ব স্ট্রিমিং সার্ভিস এ্যাপল টিভি চালু করেছে। এভাবে কনটেন্টে পুষ্টির প্রতিযোগিতায় এই বিশাল জগতের অনেক পক্ষই প্রবেশ করেছে।
সুতরাং আমেরিকায় এখন এক নতুন জোয়ার এসেছে এবং সেটা ভরা জোয়ার। এই জোয়ার হচ্ছে স্ক্রিপ্ট, সাউন্ড, স্ক্রিন ও সেলিব্রেটিদের নিয়ে। স্ট্রিমিং সার্ভিসের জন্য কনটেন্ট সৃষ্টিতে এ বছর ১০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি নগদ অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে। বিশ্বজুডে ৭০ কোটিরও বেশি গ্রাহক এখন স্ট্রিমিং সার্ভিসের বদৌলতে ভিডিও দেখছে। গত ৫ বছরে সমগ্র বিনোদন ব্যবসা স্ট্রিমিং সার্ভিস সংগ্রহ ও প্রোগ্রামিংয়ের পেছনে কমপক্ষে ৬৫ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করেছে।
বিনোদন শিল্পের বিকাশের এক পর্যায়ে অনেক মিডিয়া গ্রুপ একীভূত হয়ে সুসংহত কনগ্লোমারেটে পরিণত হয় যারা কনটেন্টের উৎপাদন ও বিতরণ উভয়কে নিয়ন্ত্রণ করে। ২০১৩ সালে কমকাস্ট এনবিসি ইউনিভার্সাল ক্রয় সম্পন্ন করে। ২০১৫ সালে টেলিকম কোম্পানি এটিএন্ডটি স্যাটেলাইট ফার্ম ডাইরেক্টটিভি কিনে নেয় এবং ২০১৮ সালে এইচবিও ও ওয়ার্নার ব্রাদার্স স্টুডিওর মালিক টাইম ওয়ার্নারকে ৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার দিয়ে ওই দুই প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়। একীভবনের এই তালগোল পাকানো অবস্থা থেকে গুটিকয়েক বৃহৎ কনটেন্ট মালিক সৃষ্টি হয়েছে। যাদের রয়েছে বিশাল ক্যাটালগ এবং পুরনো শো ও নতুন প্রোগ্রামিংয়ে বিপুল অর্থ ব্যয় করার আগ্রহ। গত অক্টোবরে এইচবিও ম্যাক্স ২৩টি পুরনো ও ৩টি নতুন সিরিজ প্রচারে আমেরিকানদের অধিকারের জন্য ৫০ কোটি ডলারেরও বেশি প্রদান করতে রাজি হয়। এটা ছিল সর্বকালের সর্ববৃহৎ অন ডিমান্ড লাইসেন্সিং ডিল। ২০১০ সাল থেকে মাত্র তিনটি গ্রুপ-ওয়ার্নার মিডিয়া, নেটফ্লিক্স ও ডিজনি মোট ২৫ হাজার কোটি ডলার স্ট্রিমিংয়ের প্রোগ্রামিংয়ে ঢেলেছে। তবে গ্রাহক জোটানো খুব যে সহজ কাজ তা নয়। এ ব্যাপারে নেটফ্লিক্সের দৃষ্টান্ত সতর্ক ইঙ্গিত বহন করে। গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি আমেরিকায় বাড়তি ৫ লাখ গ্রাহক যোগ করেছে। প্রত্যাশিত সংখ্যার দিক দিয়ে যা ৩ লাখ কম। এ বছরের প্রথম দিকে এর গ্রাহকের সংখ্যা ১২ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো কমেছে এবং সেটা হয়েছে ডিজনি, এ্যাপল ও অন্যরা এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়ার আগে। বিশ্বব্যাপী নেটফ্লিক্স এ বছর ২ কোটি ৬৭ লাখ গ্রাহক যোগ করতে পারবে বলে আশা করে যা ২০১৮ সালের ২ কোটি ৮৬ লাখের চেয়ে কম। গ্রাহক সংখ্যা ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে বিদেশ থেকে।
এদিকে প্রোগ্রামিংয়ের পেছনে অর্থ ব্যয় ক্রমশ বাড়ছে এবং তাতে মুনাফার অঙ্ক কমছে। জানা গেছে যে স্ক্রিপ্টেড ড্রামার একটি এপিসোড তৈরির গড় খরচ এখন ৬০ লাখ ডলারের কাছাকাছিÑ তিন থেকে চার বছর আগে যা ছিল তার প্রায় দ্বিগুণ। এ বছর ডিজনি থেকে শুরু করে কুইবি পর্যন্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠান কনটেন্টের পেছনে মোট ১০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করবে। এ বছর আমেরিকার তেল শিল্পে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে এটা মোটামুটিভাবে তার সমান।
ডিজনি কোম্পানি আশা করে যে তাদের স্ট্রিমিং সার্ভিস ২০২৪ সাল নাগাদ ৬ কোটি থেকে ৯ কোটি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে গেলে মোটামুটি তা ব্রেক-ইভেনে এসে দাঁড়াবে। পরিকল্পনায় আছে যে এর দুই-তৃতীয়াংশ গ্রাহক পাওয়া যাবে বিদেশ থেকে। ওয়াল স্ট্রিটের কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে সেটা করতে গিয়ে কোম্পানিকে ডিজনি প্লাস এর পেছনে বহু বছর ধরে লোকসান গুনতে হবে। কারণ স্ট্রিমিং সার্ভিস পাওয়ার কারণে লোকে এর চেয়ে ব্যয়বহুল পে-টিভির পেছনে চাঁদা দেয়া বন্ধ করে দেবে। ফলে কোম্পানি তার প্রধান ক্যাবল সার্ভিস থেকে যে মুনাফা পেত তা হাবারে। ডিজনির প্রতিদ্বন্দ্বী এটিএন্ডটি বছরে এইচ বিও ম্যাক্সের পিছনে ২শ’ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে বলে আশা করে এবং এটাও জানে যে শুরুতে এই বিনিয়োগ থেকে কোন আয় আসবে না। আশা করা হচ্ছে যে কালক্রমে এই বিনিয়োগের পরিমাণ কমে আসবে এবং আয় বাড়বে। পাঁচ বছরের মধ্যে আয়-ব্যয়ের ব্যাপারটা ব্রেকইভেনে চলে আসবে।
স্ট্রিমিং সার্ভিস নিয়ে রথী-মহারথীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থেকে একটা বড় ধরনের আলোড়ন অনিবার্য। সেই টালমাটাল অবস্থায় কে টিকবে আর কে টিকবে না তা নিয়ে বড় অনিশ্চয়তা আছে। প্রচলিত মত হলো নেটফ্লিক্সকে হটানো কঠিন হবে। নেটফ্লিক্স বিশ্বব্যাপী ১৫ কোটি ৮০ লাখ গ্রাহক সংগ্রহ করেছে এবং এমন এক ব্র্যান্ড সৃষ্টি করেছে যার আবেদন রয়েছে সকল বয়সী ও সকল রুচির মানুষের কাছে। সম্প্রতি নেটফ্লি´ ‘শেইনফেলডে’র স্বত্ত্ব কিনে নিয়েছে যা প্রতিষ্ঠানটির ‘ফ্রেন্ডস’ ও ‘দি অফিস’ নামক তার সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি অনুষ্ঠান খোয়াতে গিয়ে যে লোকসান হবে তা পুষিয়ে নিতে সাহায্য করবে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে এটিএন্ডটি নেটফ্লিক্সের কাছ থেকে ‘ফ্রেন্ডস’ এবং কমকাস্ট ‘দি অফিস’ হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা করছে। আমেরিকান ক্যাটালগে নেটফ্লিক্সের ৪৭ হাজার টিভি এপিসোড ও ৪ হাজার চলচিত্র রয়েছে। ডিজনি প্লাস প্রথম বছরে যে সাড়ে ৭ হাজার এপিসোড ও ৫শ’ ছায়াছবি পরিবেশন করবে নেটফ্লিক্সের সংগ্রহ তার চেয়ে ঢের বেশি। নেটফ্লিক্স এ বছর অরিজিনাল কনটেন্টের পেছনে ১৫শ’ কোটি ডলার ব্যয় করবে। নতুন প্রতিযোগীদের আগমনের ফলে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তার জবাবে নেটফ্লিক্সেও স্ট্র্যাটেজির ভারসাম্য বিধান করার কোন প্রয়োজন নেই বলে প্রতিষ্ঠানটির বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
রথী-মহারথীদের এই গলাকাটা প্রতিযোগিতায় ডিজনিও টিকে থাকবে। ডিজনির প্রযোজিত অনুষ্ঠানগুলো দর্শকরা না দেখে পারে না। প্রতিষ্ঠানটি যে মুনাফা করে তাও বিপুল। এ দুটো কারণে ডিজনি অন্যদের চোখে ঈর্ষার কারণ। এইচবিওর ম্যাক্সের অবস্থাও সব সম্ভাবনার বিচারে তদ্রƒপ। এই প্রতিষ্ঠানটি তার অভিভাবক কোম্পানির ১৭ কোটি গ্রাহক সম্পর্ককে কাজে লাগাতে পারে। তবে সেটা এটিএন্ডটিকে বাদ দিয়ে করা সম্ভব নয়। এইচবিও ম্যাক্স নিজ থেকে তার কোটি কোটি গ্রাহকের কাছে সহজে পৌঁছতে পারবে এমন কোন উপায় নেই। কমকাস্টের ক্ষেত্রে পিকক সার্ভিস মিডিয়ার নতুন দৃশ্যপটে স্থান করে নিয়ে যেমন মুনাফা নিয়ে আসছে তেমনি এটিএন্ডটির ক্ষেত্রেও এইচবিওর দেয়া বিনোদন তার আয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসে পরিণত হয়েছে। টেলিফোন জগতের বিশাল শক্তি এটিএন্ডটি ওয়্যারলেস গ্রাহকদের সংগ্রহ করা ও ধরে রাখার জন্য এইচবিও ম্যাক্সকে কাজে লাগাবে। কনটেন্টের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের কুশীলবদের যেমন ডিসকভারি ও সনি এন্টার টেইনমেন্টকে তাদের উপযুক্ত স্থান খুঁজে বের করতে হবে। সিবিএস ও ভায়াকম এখন এক হতে যাচ্ছে। তারা অস্ত্র ব্যবসায়ীর কৌশল ধরতে চলেছেÑঅর্থাৎ যারাই কিনতে চাইবে তাদেরকেই কনটেন্ট যোগান দেয়া।
কালক্রমে যেসব কোম্পানি বিভিন্ন স্ট্রিমিং সার্ভিসকে সহজ উপায়ে একত্রিত করতে পারবে তারাই লাভের ফসল ঘরে তুলে নেবে। যে বিপুল পরিমাণে কনটেন্ট আসছে তা দেখে গ্রাহকেরা অভিভুত এবং দিশেহারা। বিভিন্ন প্লাটফর্মে অনুষ্ঠান খুঁজতে গিয়ে তারা উত্তরোত্তর বিরক্ত হয়ে উঠছে। ভিডিওর এই প্রবল হানা থেকে তাদের রক্ষা করতে কমকাস্ট ও ভেরাইজনের মতো ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা সাহায্য করতে পারে। দৃষ্টান্তস্বরূপ কমকাস্টের শুধুমাত্র ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী গ্রাহকদের জন্য এক্সফিনিটি ফ্লেক্স নামে একটি নতুন সার্ভিস চালু হয়েছে যা বিনা তারে এক শ’ ভিডিও ও মিউজিক সার্ভিস ব্যবহার করার সুযোগ দেয়।
এরপর আছে প্রযুক্তি জায়ান্টরা। তাদের কাছে বিনোদন তৈরিই শেষ কথা নয়, এ্যামাজনের কাছে টিভি হলো গ্রাহকদের ধরে রাখা এবং আরও পণ্যের বার্তা তাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে সেগুলো বিক্রি করার একটা উপায়। এ্যাপলের কাছে টিভি হলো হার্ডওয়্যার বিক্রি করা এবং এর বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস সম্প্রসারিত করার একটা মাধ্যম।
এই অবস্থায় উন্নতমানের কনটেন্টের ভবিষ্যত কি হবে তা নিয়ে মিডিয়া কর্মকর্তাদের অনেকেই উদ্বিগ্ন। আবার অনেকে বলেন যে, পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে সবকিছু খাপ খাইয়ে নেয়া হবে। যেমন এ্যাপল ও এ্যামাজন ইতোমধ্যেই নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে। অর্থের প্রবাহ যতক্ষণ থাকবে সৃজনশীলতার বিকাশও ততক্ষণ হওয়া উচিত। এ পর্যন্ত শেয়ার হোল্ডাররাও মনে হয় অর্থ ও সৃজনশীলতার প্রবাহ ঘটতে দেখে আনন্দিত। নেটফ্লিক্সের শেয়ারের দর ২০১৮ সালের মাঝামাঝি নাগাদ তুঙ্গে উঠেছিল। সেখান থেকে হ্রাস পেলেও উপার্জনের দিক দিয়ে কোম্পানির রেটিং অনেক উঁচুতে রয়েছে। ডিজনি গত এপ্রিলে বিনিয়োগকারীদের কাছে ডিজনি ‘প্লাস’-এর বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করার পর কোম্পানির শেয়ার ২৮ শতাংশ বেড়েছে। এটিএন্ডটি ও কমকাস্টেও শেয়ারের দাম এ বছর বেড়েছে।
যাই হোক, স্ট্রিমিং যুদ্ধ ভিডিও বিনোদনকে ছাড়িয়ে মিডিয়াকে নতুন চেহারা দান করেছে। আজ যে কোন একটি কোম্পানির পক্ষে জনগণের অনুষ্ঠান দেখার ব্যাপারে বিশাল প্রভাব বিস্তার করা কঠিনতর হয়ে পড়েছেÑ প্রত্যেক কোম্পানিরই তদনুযায়ী খাপ খাইয়ে নেয়া প্রয়োজন। স্ট্রিমিং যুদ্ধের কারণে বিনোদন ও টেলিভিশন সংবাদের মধ্যে যোগসূত্রও দুর্বল হয়ে পড়ছে। এটা সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান রুপার্ট মারডকের টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফক্স-এর বেশিরভাগ শেয়ার ডিজনির কাছে বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্তের মধ্যে।
বিনোদন শিল্পের ওপর যেসব সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে তার দ্বারাই নির্ধারিত হবে টেক জায়ান্টরা এর পর কি করবে। কিছু কিছু লোক মনে করে এ্যাপল বিনোদনের ওপর ব্যয় হ্রাস করতে এমনকি ব্যবসায় ছেড়ে দিতেও পারে। এ্যাপল কি করবে না করবে এই ব্যাপারটা এ্যামাজনের চাইতেও অধিক অনিশ্চিত। এ্যামাজন সম্ভবত কনটেন্ট তৈরি ও পরিবেশনেই অঙ্গীকারাবদ্ধ। তবে হলিউডের অধিকাংশের ধারণা হলো বৃহৎ টেক কোম্পানিগুলোর বিপুল অঙ্কের নগদ অর্থ জমে ওঠায় এবং তাদের এক একটির মূল্য ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ায় তারা নতুন পথে পা বাড়ানো সবে শুরু করেছে। তারা সহজেই একটি বা দুটি মিডিয়া ফার্ম গ্রাস করে নিতে পারে।
এন্টিট্রাস্ট আইন প্রয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান গুগলের অভিভাবক সংস্থা ‘এলফাবেট’-এর এ ধরনের যে কোন উদ্যোগ কোণঠাসা করতে পারে। এ্যামাজনের পক্ষেও দ্রুত সম্প্রসারণ চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে এ্যাপলের জন্য সময়টা সহজতর হয়ে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা আছে। ওদিকে স্ট্রিমিং যুদ্ধ নেটফ্লিক্সের প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে এবং এর অর্থ সম্পদের ওপর চাপ পড়তে পারে।
সূত্র : দি ইকোনমিস্ট