সোমবার ● ২৫ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » দেশের সব ভূমিকে জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং করা হচ্ছে
দেশের সব ভূমিকে জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং করা হচ্ছে
মৌজা ও প্লট ভিত্তিক দেশের সব ভূমিকে জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের বিভিন্ন খাতের ব্যয়ের বিভাজন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। সাড়ে চার বছরের এই প্রকল্পে ৩৬ জন পরামর্শক পাঁচ বছরের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। যাদের মাথাপিছু মাসিক সম্মাননা হলো ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকার বেশি। আর একজন কর্মকর্তার বদলি ব্যয়ই ১০ লাখ টাকা। আর মাথাপিছু ভ্রমণব্যয় তিন লাখ টাকা। প্রকল্পের এই সব ব্যয়ের বিভাজনকে যৌক্তিক পর্যায় করার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কৃষি, পানি ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ডিজিটাল ভূমি জোনিংয়ের ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, সাড়ে চার বছরের এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ জিওবিতেই এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯৩টি উপজেলায় চার হাজার ৫৬২টি ইউনিয়নের ৫৬ হাজার ৩৪৯টি মৌজা এই প্রকল্পের আওতায় থাকছে।
ভূমির গুণাগুণ অনুযায়ী ভূমিকে প্লটওয়ারী কৃষি, আবাসন, বনায়ন, জলমহাল বাণিজ্যিক ও শিল্প উন্নয়ন, পর্যটন ইত্যাদি শ্রেণীতে বিভক্ত করে গ্রামাঞ্চলের জন্য মৌজা ও প্লটভিত্তিক ডিজিটাল ভূমি জোনিং ম্যাপ প্রণয়ন করা। মাঠ পর্যায়ে ভূমি ব্যবস্থাপনার ওপর সিদ্ধান্ত নেয়ার সুবিধার্থে কেন্দ্রীয়ভাবে কম্পিউটারাইজ ভূমি তথ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি স্থাপন করা ইত্যাদি এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের মোট কৃষি জমি প্রায় ৮৪ শতাংশ। কিন্তু এখন এই জমি কমে যাচ্ছে। ভূমি ব্যবহার নীতি-২০০১ বাস্তবায়নকল্পে ভূমি মন্ত্রণালয় ২০০৬-২০১১ মেয়াদে উপকূলীয় ভূমি জোনিং প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। যার মাধ্যমে ১৫২টি উপকূলীয় উপজেলার ভূমি জোনিং ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে দেশের ৩৩৬টি উপজেলায় ভূমি জোনিং এবং ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও ম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের জন্য মৌজা ও প্লট ভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। মোট ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪১২টি মৌজা ম্যাপ তৈরি করা হবে।
প্রকল্পের কার্যক্রম বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প মেয়াদের চেয়ে ছয় মাস বেশি মেয়াদে ৩৬ জন পরামর্শক নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যাদের জন্য ব্যয় হবে ২৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ফলে মাথাপিছু পরামর্শক খাতে মাসে খরচ ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকার বেশি। পাঁচ বছরে একজন পরামর্শকের সম্মানী হলো ৮৩ লাখ টাকা।
অন্য দিকে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ ব্যয় ২২ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এই ব্যয় জিওবি খাত থেকে বাদ দেয়ার জন্য সেচ উইং থেকে বলা হয়েছে। অফিস বাবদ ৭৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। প্রকল্পে ৫০ জনের ভ্রমণব্যয় দেড় কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এখানে মাথাপিছু ভ্রমণ খরচ পড়ছে তিন লাখ টাকা। বদলি বাবদ একজনের খরচ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৩০ লাখ টাকা স্ট্যাম্প, কুরিয়ার ও ডাক বাবদ ধরা হয়েছে। প্রতি মাসে এই খাতে প্রায় ৫৬ হাজার টাকা খরচ হবে। আবার স্ট্যাম্প, সিল বাবদ ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। এই খাতের ব্যয় কমিয়ে আনার জন্য সেচ উইং থেকে বলা হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেচ উইংয়ের যুগ্ম প্রধান স্বাক্ষরিত কার্যপত্র ও উইং সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই প্রকল্পের জন্য ৩৬ জন পরামর্শকের প্রয়োজন আছে কি না। তা ছাড়া কাজের প্রকৃতি ও ধরন অনুযায়ী সব পরামর্শকের ক্ষেত্রে ৬০ মাস প্রয়োজন নাও হতে পারে। তাই পরামর্শক সংখ্যা ও মেয়াদ কমিয়ে আনা প্রয়োজন। এ ছাড়া উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কারিগরি কমিটি গঠন প্রকল্পের ডিপিপিতে সংযোজন করা দরকার। যারা পরামর্শকের সম্পাদিত কাজ বুঝে নেবে। প্রকল্পের অফিস বাবদ ৭৫ লাখ টাকা ভাড়া প্রস্তাব বাদ দেয়ার জন্য বলেছে। কারণ নীলক্ষেতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ভবনে বাস্তবায়নাধীন ভূমি জোনিং প্রকল্পের অফিস রয়েছে।
তারপরও এই ভাড়া বাবদ বরাদ্দ কেন? একটি প্রকল্পের সেমিনার, কর্মশালা ও কনফারেন্সের জন্য ১০ কোটি টাকা মাত্রাতিরিক্ত। এটা কমিয়ে দেড় কোটি টাকা করা যেতে পারে।