বুধবার ● ২০ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » ভারতে বৃদ্ধি পাচ্ছে মোবাইল কল রেট ও ইন্টারনেট ডাটার দাম
ভারতে বৃদ্ধি পাচ্ছে মোবাইল কল রেট ও ইন্টারনেট ডাটার দাম
ভারতীয়রা বিশ্বের সবচেয়ে কম দামে ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহার করেন। দেশটিতে মোবাইল কল রেটও তুলনামূলক কম। বিশেষত রিলায়েন্স জিও ইনফোকম টেলিকম খাতে আসার পর মূল্যযুদ্ধের জের ধরে দেশটিতে মোবাইল কল রেট অনেকটাই কমে গেছে। গত তিন বছরে ভারতে একবারো মোবাইল কল রেট ও ইন্টারনেট ডাটার দাম বাড়ানো হয়নি বরং ক্রমাগত কমেছে। এবার ভারতীয়দের জন্য এ দুটি সেবার দাম বাড়তে পারে। ক্রমাগত লোকসানের মুখে ভোডাফোন আইডিয়া ও ভারতী এয়ারটেল ডিসেম্বর থেকে বাড়তি শুল্কের ঘোষণা দিয়েছে। এতে এ দুটি অপারেটরের গ্রাহকদের মোবাইল কল রেট ও ইন্টারনেট ডাটা কিনতে বাড়তি অর্থ গুনতে হতে পারে। তবে রিলায়েন্স জিও দাম অপরিবর্তিত রাখলে বিদ্যমান মূল্যযুদ্ধ ভিন্ন মাত্রা পাবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ও ইকোনমিক টাইমস।
তিন বছর আগে ভারতের টেলিকম খাতে মূল্যযুদ্ধের সূচনা করে রিলায়েন্স জিও। বাজার দখলের জন্য সেলফোনের কল রেট ও ইন্টারনেট ডাটার দাম অনেকটাই কমিয়ে দেয় জিও। ফলাফল হিসেবে ৩৪ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক নিয়ে জিও এখন (গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ও ভারতের সবচেয়ে বড় সেলফোন অপারেটর। জিওর গ্রাহক বাড়লেও এমন আগ্রাসী নীতি ভারতের টেলিকম খাতের অন্যান্য কোম্পানির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। গ্রাহক হারিয়ে ক্রমাগত লোকসান সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তারা।
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ভোডাফোন আইডিয়া রেকর্ড ৫০ হাজার ৯২২ কোটি রুপি লোকসান করেছে। অন্যদিকে একই সময়ে ভারতী এয়ারটেলের লোকসান দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৪৫ কোটি রুপিতে। গত ১৪ বছরের মধ্যে এটাই তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ লোকসানের রেকর্ড। ক্রমাগত লোকসান এড়াতে কোম্পানি দুটি ডিসেম্বর থেকে কল রেট ও ইন্টারনেট ডাটার ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পৃথক বিবৃতিতে কোম্পানি দুটি জানিয়েছে, ভারতের টেলিকম খাতের আর্থিক শ্লথতা, বিদ্যমান নিম্ন শুল্কহার এবং নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে বাড়তি ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তা থেকে এমন অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া বিকল্প নেই। তবে কল রেট ও ডাটার দাম কতটুকু বাড়তে পারে, তা জানানো হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, দাম বর্তমানের তুলনায় ন্যূনতম ৩০ শতাংশ বাড়তে পারে।
এ বিষয়ে ভারতীয় টেক বিশ্লেষক প্রশান্ত কে রায় বলেন, পশ্চিমা দেশ, এমনকি চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় ভারতে কল রেট ও ইন্টারনেট ডাটার দাম অনেক কম। এটা বাড়নো হলে টেলিকম কোম্পানির ক্রমাগত লোকসানের হার কমে আসবে। তবে জনগণের ওপর বাড়তি ব্যয়ের চাপ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে লাইসেন্স নবায়ন নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে টেলিকম কোম্পানিগুলোর বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। সম্প্রতি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এ ইস্যুতে সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছেন। ফলে টেলিকম কোম্পানিগুলোকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ১ কোটি ২৫ লাখ ডলার জমা দিতে হবে। এটা লোকসানের মুখে থাকা ভারতের টেলিকম অপারেটরগুলোর জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলে মনে করছেন প্রশান্ত রায়। তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো কল রেট ও ইন্টারনেট ডাটার সম্ভাব্য মূল্য বৃদ্ধির পেছনে এটাও বড় একটি কারণ।
গ্লোবাল রেটিং ফার্ম ফিচের পরিচালক (করপোরেট) নিতিন সোনি জানান, ভারতী এয়ারটেল ও ভোডাফোন আইডিয়া যদি কল রেট ও ইন্টারনেট ডাটার ওপর বিদ্যমান শুল্ক গড়ে ১০ শতাংশ বাড়ায়, তবে পরবর্তী প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ৩ হাজার ৫০০ কোটি থেকে ৩ হাজার ৬০০ কোটি রুপি বাড়তি আয় করতে পারবে। এজন্য কোম্পানি দুটিকে বর্তমান গ্রাহকসংখ্যা অপরিবর্তিত রাখতে হবে কিংবা বাড়াতে হবে। তবে কল রেট ও ইন্টারনেট ডাটার দাম বাড়লে অনেক গ্রাহক জিওতে চলে যেতে পারেন। এতে জিওর ব্যবসা আরো ফুলে ফেঁপে উঠলেও ধুঁকতে থাকবে অন্য কোম্পানিগুলো। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটাই ভারতী এয়ারটেল ও ভোডাফোন আইডিয়ার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।