সোমবার ● ৪ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি পড়াশোনা » আইসিসিআইটি-তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ২২তম আয়োজন
আইসিসিআইটি-তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ২২তম আয়োজন
বাংলাদেশে কম্পিউটার এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সর্ব প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের যাত্রা শুরু হয় আজ থেকে ২২ বছর আগে ১৯৯৮ সালে। সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক সেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। বর্তমানে এটি আইসিসিআইটি নামেই বেশি পরিচিতি লাভ করেছে। কিন্তু এর উদ্ভব হয়েছিল ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি জাতীয় সম্মেলন থেকে যার শিরোনাম ছিল- “কম্পিউটার এবং তথ্য কাঠামোবিষয়ক জাতীয় সম্মেলন”- যা সে সময় এনসিসিআইএস নামে বেশি পরিচিত ছিল। এরপর সেই সম্মেলনটিই ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের রূপলাভ করে। তারপর থেকে এই সম্মেলনটি বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যায়ক্রমে আয়োজিত হয়ে আসছে। সুদীর্ঘ ২২ বছরব্যাপী পরিচালিত আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দ্বারা মূল্যায়িত এবং স্বীকৃত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের কারিগরি সহযোগিতায় রয়েছে তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশলীদের আন্তর্জাতিক সংগঠন- ইনস্টিটিউট অব ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার্স বা সংক্ষেপে আইইইই।
বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে পরিচালিত আইসিসিআইটি সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় সে সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো ২০১৮ সালে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৭ সালে এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৬ সালে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৫ সালে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ২০১৪ সালে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১৩ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ২০১১ সালে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়-বাংলাদেশ, ২০১০ সালে আহসানউলস্নাহ্ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ২০০৯ সালে ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়-বাংলাদেশ, ২০০৮ সালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ২০০৭ সালে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, ২০০৬ সালে ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়-বাংলাদেশ, ২০০৫ সালে ইসলামিক প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ২০০৪ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ২০০৩ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ২০০২ সালে ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ২০০১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২০০০ সালে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৯ সালে শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (এটি অবশ্য একটি জাতীয় সম্মেলন ছিল)।
এ বছরের আইসিসিআইটি অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তেজগাঁও স্থায়ী ক্যাম্পাসে। এবারের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কম্পিউটার এবং তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক পেশাজীবী, উদ্যোক্তা, গবেষক, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষার্থীরা এ বিষয় নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা, ধ্যানধারণা, দর্শন, জ্ঞান এবং গবেষণালব্ধ ফলাফলের ওপর আলোচনা-পর্যালোচনার এক অনন্য মাধ্যম তথা মঞ্চ তৈরি করে দেয়া। এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা তাদেরসহ-গবেষক এবং অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কম্পিউটার এবং তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা ও মতামত আদান-প্রদানের সুযোগ পেয়ে থাকে। এই সম্মেলন মূলত কম্পিউটার এবং তথ্যপ্রযুক্তি, কম্পিউটার প্রকৌশল, যোগাযোগ প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ক বিভিন্ন নতুন নতুন আবিষ্কার এবং সাম্প্রতিক বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটানোর চেষ্টা করে থাকে। এই বছর যে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে তার কিছু উলেস্নখযোগ্য দিক হলো- অ্যালগরিদম বা গাণিতিক পরিভাষা, কম্পিউটারের মাধ্যমে বাংলা ভাষার প্রক্রিয়াকরণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বায়ো-ইনফরমেটিক্স, ক্লাউড কম্পিউটিং, কম্পিউটারভিত্তিক শিক্ষা, কম্পিউটার গ্রাফিক্স, মাল্টিমিডিয়া, কম্পিউটার অন্তর্জাল, ডাটা আদান-প্রদান, কম্পিউটার দৃষ্টি, ক্রিপ্টোগ্রাফি, অন্তর্জাল নিরাপত্তা, সংকেত বিজ্ঞান, সাইবার নিরাপত্তা, ডিজিটাল পদ্ধতি, ডিজিটাল পরিগণনা, ডিজিটাল নকশা ও কাঠামো তৈরি, যুক্তিবিদ্যা, ফাজি কাঠামো, ডাটা ও তথ্যবিশ্লেষণ, ধরন নির্ণয় ও বিশ্লেষণ, ডিজিটাল সংকেত ও ছবির প্রক্রিয়াকরণ, তথ্য প্রকৌশল বিদ্যা, নির্ভরতা প্রকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগবিষয়ক শিক্ষা এবং এর ফলাফল মূল্যায়ন, অন্তর্জাল সংক্রান্ত বস্তু, মডেলিং এবং সিমিউলেশন, গভীর যান্ত্রিক শিক্ষা, তথ্য-উপাত্ত কাঠামো, তথ্যের খনি, কোয়ান্টাম পরিগণনা, স্নায়ুবিক অন্তর্জাল, সমান্তরাল ও পরিব্যপ্ত কাঠামো, রবোটিক্স, স্বয়ংক্রিয় কাঠামো, স্যাটেলাইট যোগাযোগ, মোবাইল যোগাযোগ, তারবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা, সফটওয়্যার প্রকৌশল, কাঠামোর নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ, অতি উচ্চমাত্রার সার্কিট সমন্বয়, তথ্য সেবার মান ও এর নিশ্চয়তা, তার বিহীন অনুভূতি যোগাযোগ প্রভৃতি। এই খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং দেশে চতুর্থ শিল্প বিপস্নব মোকাবিলায় এ সম্মেলন বিশেষ অবদান রাখতে পারবে।
এ সম্মেলনের সভাপতি হলেন- আমেরিকা প্রবাসী দু’জন প্রথিতযশা বাংলাদেশি বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আতাউল করিম এবং অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শওকতুল আলম। তাদের মধ্যে অধ্যাপক করিম তড়িৎ চৌম্বকীয় ব্যবস্থায় রেলগাড়ি চালানোর এবং আলোর মাধ্যমে ডিজিটাল পরিগণনা পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত। তিনি এখন আমেরিকার ডার্টমাউথে অবস্থিত ম্যাসাচুসেস্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভোস্ট ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা। আর তারই সুযোগ্য ছাত্র অধ্যাপক আলম সংকেত ও ছবি প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে গবেষণার জন্য সুবিখ্যাত। তিনি এখন আমেরিকার টেক্সাসের কিংস ভিলে অবস্থিত টেক্সাস কৃষি ও যান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন। এ ছাড়াও অধ্যাপক আলম এই সম্মেলনের কারগরি কমিটির প্রধান। এ ছাড়া এই কনফারেন্সে জমাকৃত প্রবন্ধের সততা যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি আছে যার প্রধান আমেরিকার মানকাতোয় অবস্থিত মিনোসোটা রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহ্বুবুর রহমান। প্রথমেই জিচেয়ার নামক অন্তর্জালভিত্তিক একটি নাম করা সম্মেলন ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যারের মাধ্যমে গবেষক তাদের গবেষণা প্রবন্ধসমূহ জমা দেন। এরপর কারিগরি কমিটির প্রধান এবং গবেষণার সততা যাচাই কমিটির প্রধান জমাকৃত প্রবন্ধসমূহ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য টার্নইটইন নামক সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রতিটি প্রবন্ধের নকলের মাত্রা যাচাই করেন। যদি এই মাত্রা নির্ধারিত সীমার বেশি থাকে তাহলে তা বাতিল বলে গণ্য হয় আর যদি কম থাকে তাহলে সেটাকে অন্তত তিনজন দেশি-বিদেশি নিরীক্ষকের কাছে পাঠানো হয়। তারা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তাদের মতামত প্রদান করে থাকেন। এরপর প্রতিটি গবেষককে ফলাফল ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। প্রতিবছরই গড়ে মোট জমাকৃত গবেষণা প্রবন্ধের কম-বেশি মাত্র ৩০% গৃহীত হয় সম্মেলনে উপস্থাপনের জন্য। এ থেকেই বুঝা যায় এ সম্মেলনের মান কোনো পর্যায়ে রয়েছে।
এ বছর এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টের সম্মানিত সভাপতি মো. রেজাউল করিম আর পৃষ্ঠপোষক সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এন এম মেশকাত উদ্দীন। তা ছাড়া এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজক কমিটির প্রধান সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ও স্বনামধন্য বিভাগ তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বা সংক্ষেপে ইইই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মুহিবুল হক ভূঞা। তিনি ফলাফলভিত্তিক শিক্ষা-গবেষণা ও প্রশিক্ষণের জন্য বিখ্যাত।
এ সম্মেলনে যাদের গবেষণা প্রবন্ধ গৃহীত হবে তাদের প্রতিটি প্রবন্ধের জন্য নিবন্ধন করতে হবে এবং সম্মেলনের নির্দিষ্ট দিনে তা সশরীরে এসে উপস্থাপন করতে হবে। নিবন্ধন ফি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য এই ফি মাত্র ৩০০০-৪০০০ টাকা এবং পেশাজীবীদের জন্য এই ফি ৬৫০০-৮০০০ টাকা। তবে আইইই সদস্য হলে নির্ধারিত ফি’র ওপরে অন্তত ২০% ছাড় আছে। যেহেতু এ সম্মেলন আইইইই কর্তৃক স্বীকৃত তাই সব নিবন্ধিত ও উপস্থাপিত প্রবন্ধসমূহ আইইইই অনলাইন ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হবে। তখন সেটা আইইইই’র স্বত্ত্ব ও সম্পদ বলে বিবেচিত হবে। তাই সবাইকে সর্বশেষ সংশোধিত প্রবন্ধ জমাদানের সময় প্রতিটি প্রবন্ধের জন্য একটি করে আইইইই’র ইলেক্ট্রনিক স্বত্ত্বপ্রদান ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে।