মঙ্গলবার ● ২৯ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » পেন্টাগনের ১০ বিলিয়ন ডলারের কাজ পেল মাইক্রোসফট
পেন্টাগনের ১০ বিলিয়ন ডলারের কাজ পেল মাইক্রোসফট
মাইক্রোসফট করপোরেশন পেন্টাগনের ১ হাজার কোটি ডলারের (১০ বিলিয়ন) ক্লাউড কম্পিউটিং চুক্তি জিতেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যামাজনকে হটিয়ে এ চুক্তি বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে মাইক্রোসফট। গত শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। খবর রয়টার্স।
পেন্টাগনের এ ক্লাউড কম্পিউটিং চুক্তি নিয়ে প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। কর্মীদের তীব্র আপত্তির মুখে গত বছরের শেষ দিকে পেন্টাগনের সঙ্গে ক্লাউড কম্পিউটিং চুক্তিতে না যাওয়ার ঘোষণা দেয় গুগল। একই সময় দেশটির সেনাবাহিনীর কয়েকটি প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে পেন্টাগনের সঙ্গে ক্লাউড কম্পিউটিং চুক্তি ইস্যুতে গুগলের ঠিক বিপরীত পথে হাঁটার ঘোষণা দিয়েছিল মাইক্রোসফট। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথ ঘোষণা দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে নিজেদের সব ধরনের প্রযুক্তি সরবরাহে ইচ্ছুক বিশ্বের শীর্ষ সফটওয়্যার নির্মাতা মাইক্রোসফট।
পেন্টাগনের ক্লাউড কম্পিউটিং চুক্তি নিয়ে প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল। এ চুক্তিতে অ্যামাজনের আগ্রহ নিয়ে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করে। বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। চুক্তিটিকে কেন্দ্র করে অ্যামাজন ও এর প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসকে একহাত নিয়েছিলেন তিনি। গত আগস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, পেন্টাগনের সঙ্গে অ্যামাজনের ক্লাউড কম্পিউটিং চুক্তির বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখছেন তিনি।
‘জয়েন্ট এন্টারপ্রাইজ ডিফেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার ক্লাউড (জেইডিআই)’ চুক্তিটি পেন্টাগনের আরো বিস্তৃত ডিজিটাল আধুনিকীকরণের অংশ, যা মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগকে প্রযুক্তিগত দিক থেকে আরো উন্নত করবে। বিশেষ করে, জেইডিআইয়ের ফলে মার্কিন সেনাবাহিনী প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষের তথ্য এবং ক্লাউড প্রযুক্তিতে সহজ প্রবেশাধিকার পাবে। পেন্টাগনের এ চুক্তি হস্তগত করতে মাইক্রোসফট ও অ্যামাজন দীর্ঘদিন লড়াই চালিয়ে আসছে।
ওরাকল করপোরেশন আগেই পেন্টাগনের ক্লাউড কম্পিউটিং চুক্তি বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের হয়ে কাজ করা সাবেক এক অ্যামাজন কর্মীর উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, প্রকল্পটি অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা নীতিমালার পরিপন্থী। যে কারণে অ্যামাজন ছেড়ে প্রতিরক্ষা বিভাগের ক্লাউড প্রকল্পে যোগদানকারী কর্মীও কিছুদিনের মধ্যে চাকরি ছাড়েন এবং পুনরায় অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেসে যোগদান করেন।
বহুজাতিক প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর সেনাবাহিনীর নানা প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। গত বছরের জুনে গুগলের কয়েক হাজার কর্মী প্রতিষ্ঠানটির তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মার্কিন সেনাবাহিনীর ড্রোন ফুটেজে ব্যবহারসংক্রান্ত চুক্তিতে তীব্র আপত্তি জানান। গুগল শেষ পর্যন্ত ওই চুক্তিও বাতিল করে।
অবশ্য মাইক্রোসফটের প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথ গত ডিসেম্বরেই জানিয়েছিলেন, প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কোনো উদ্বেগ থাকলে তারা তা শুনতে রাজি। পেন্টাগনের ক্লাউড কম্পিউটিং প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে তখনই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া গত বছরের অক্টোবরেও মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সত্য নাদেলা ও ব্র্যাড স্মিথ মিলে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রকল্পে যুক্ত থাকার বিষয়ে আলোচনা করেন।
ব্র্যান্ড স্মিথের ভাষ্যে, ‘আমরা মনে করি যুক্তরাষ্ট্রের শক্ত প্রতিরক্ষার প্রয়োজন। যেসব মানুষ মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত, তাদের সবার মাইক্রোসফটসহ যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ থাকা উচিত। কাজেই মাইক্রোসফটে যারা কাজ করেন, তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্তের পক্ষে সমর্থন চাওয়া বা প্রত্যাশা করা হবে না। যারা এ প্রকল্পে কাজ করতে চান না, তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো হবে।’
গত বছর অক্টোবরে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ১০ বিলিয়ন ডলারের জেইডিআই প্রকল্পের ক্লাউড কম্পিউটিং চুক্তির দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয় অ্যালফাবেট নিয়ন্ত্রিত গুগল। নৈতিক নীতিমালার সঙ্গে ওই প্রকল্প সাংঘর্ষিক বলেই এ সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গুগলের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যার ব্যবহারের মূল বাধা হচ্ছে, এটি অস্ত্র বা যেকোনো ক্ষতিকর সার্ভিসে ব্যবহার করা হলে তা মানবাধিকার ও নজরদারির আন্তর্জাতিক নীতির বিরুদ্ধে যাবে।
গত বছর মার্চে গুগল মার্কিন সরকারের তথ্য নিয়ে পরিমিত পরিসরে নিরাপত্তার কাজ করার সনদ পায়। এক্ষেত্রে মাইক্রোসফট ও অ্যামাজন ডটকম পুরোপুরি অনুমতি পেয়েছে। পেন্টাগনের ক্লাউড কম্পিউটিং চুক্তির ক্ষেত্রে অ্যামাজনকেই এগিয়ে রাখা হয়েছিল। তবে চুক্তিটি মাইক্রোসফটের হস্তগত হওয়ায় প্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্টরা কিছুটা অবাক হয়েছেন।