মঙ্গলবার ● ২২ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » অ্যাকসেসরিজ ব্যবসায় মনোযোগ দিচ্ছে চীনা কোম্পানিগুলো
অ্যাকসেসরিজ ব্যবসায় মনোযোগ দিচ্ছে চীনা কোম্পানিগুলো
ভারতের স্মার্টফোন বাজার এখন চীনা কোম্পানিগুলোর দখলে। শাওমি, অপো, ওয়ানপ্লাস, ভিভো, রিয়ালমির মতো ব্র্যান্ডের দাপটে এরই মধ্যে স্থানীয় কোম্পানিগুলো কোণঠাসা। তবে এতে থেমে থাকছে না চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। এবার তারা ভারতের প্রযুক্তির লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড হওয়ার পরিকল্পনায় নেমেছে। আর এক্ষেত্রে তাদের মূল লক্ষ্যই মুনাফা বৃদ্ধি। শাওমি এরই মধ্যে ফোন, টিভি ও আইওটি অ্যাকসেসরিজ ব্যবসায় জায়গা করে নিয়েছে। বাকিরাও দ্রুত এটিকে অনুসরণ করছে। খবর ইকোনমিক টাইমস।
কেবল, ইয়ারফোন, চার্জার ও পাওয়ার ব্যাংকের মতো অ্যাকসেসরিজ ব্যবসার আকার মোটামুটি সাড়ে ৯ হাজার কোটি রুপি। চলতি বছর ৯ হাজার ৫৭৭ কোটি রুপিতে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও এ বাজারের ৭০ শতাংশই অস্পষ্ট ও অনানুষ্ঠানিক। তারপরও বাজারের যে প্রবণতা, তাতে ২০২৬ সাল নাগাদ ভারতে অ্যাকসেসরিজ ব্যবসা ২৮ হাজার কোটি রুপিতে (৪০০ কোটি ডলার) দাঁড়াবে বলে ধারণা করছেন শিল্পসংশ্লিষ্টরা।
ভারতের স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাং, মটোরোলা, আইফোন, নকিয়াসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডের পাশাপাশি স্থানীয় কয়েকটি ব্র্যান্ডের উপস্থিতি থাকলেও বর্তমানে চীনা ব্র্যান্ডগুলোর অংশীদারিত্ব সবচেয়ে বেশি। রাজস্ব ও মুনাফা দুদিক থেকেই তারা আধিপত্য করছে। এদিক থেকে সবার চেয়ে এগিয়ে শাওমি। এ কোম্পানি এবার স্মার্টফোন ও স্মার্টটিভির ওপর ভর করে অ্যাকসেসরিজ এবং আইওটি ইকোসিস্টেম ব্যবসায় নেমেছে। রিয়ালমি ও ওয়ানপ্লাসও এদিকে জোর দিচ্ছে। আর ভিভো আগামী বছর এ বাজারে প্রবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে।
রিয়ালমি ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাধব শেঠ বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে আমরা টেক লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড হয়ে উঠতে চাই। নানা অ্যাকসেসরির সম্ভাবনা যাচাই করছি। এর মধ্যে কোম্পানির কেবল ও চার্জার ব্যবসা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ২০২০ সালে অ্যাকসেসরিজ কোম্পানির রাজস্বের বড় উৎস হয়ে উঠবে। আমাদের লক্ষ্য আগামী বছর মোট রাজস্বের ৫ শতাংশই যেন আসে অ্যাকসেসরিজ ব্যবসা থেকে।
এদিকে ভারতের প্রিমিয়াম স্মার্টফোন বাজারে বৃহত্তম ব্র্যান্ড ওয়ানপ্লাসও নতুন ধরনের অ্যাকসেসরিজ নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে। ওয়ানপ্লাসের সহপ্রতিষ্ঠাতা কার্ল পেই বলেন, অ্যাকসেসরিজ ব্যবসা এখন বেশ ভালো করছে। তবে কোম্পানির আরো ভালো করার সক্ষমতা আছে।
তিনি বলেন, আরো নতুন ও সৃজনশীল পণ্য আনতে আমাদের আরো বিনিয়োগ করতে হবে। গত দুই বছরে এ ব্যবসা বেড়েছে। সুতরাং আমরা আরো সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করলে আরো ভালো কিছু হবে।
অ্যাকসেসরিজ ব্যবসা নিয়ে বিশ্লেষকরাও বেশ ইতিবাচক। তারা বলছেন, এ খাতটিতে উচ্চ মুনাফার সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে প্রান্তিক মুনাফা ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। হ্যান্ডসেট কোম্পানিগুলো এ সুযোগটি লুফে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে অ্যাপলকে বড় দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। মার্কিন টেক জায়ান্টটি শুধু অ্যাকসেসরিজ বিক্রি করেই কয়েকশ কোটি ডলার আয় করে।
প্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান টেক আর্কের প্রতিষ্ঠাতা ফয়সাল কাউসা বলেন, প্রতিষ্ঠিত স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো যখন তাদের ফোনের পাশাপাশি নিজস্ব অ্যাকসেসরিজ আনছে, তখন গ্রাহকদের ওই কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আরো গভীর ও বিস্তৃত হচ্ছে। এ খাতে ব্যাপক মুনাফার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে প্রান্তিক মুনাফা ৩০-৩৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন আরেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টার পয়েন্টের প্রযুক্তি বাজার গবেষণা বিশ্লেষক কর্ন চৌহান। তিনি বলেন, অ্যাকসেসরিজ ব্যবসায় ক্ষেত্রবিশেষে প্রান্তিক মুনাফা ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ হতে পারে। মোবাইল অ্যাকসেসরিজ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রান্তিক মুনাফা এনে দিতে পারে। এর মধ্যে এমন কিছু পণ্য রয়েছে, যেমন পাওয়ার ব্যাংক, হেডফোন, ব্যাক কভার ইত্যাদি স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্ক ও যোগাযোগ আরো ঘনিষ্ঠ করে।