মঙ্গলবার ● ২২ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » বাতিল হতে পারে রবির হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ
বাতিল হতে পারে রবির হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নিরীক্ষা দাবির যৌক্তিকতা ও এ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে অর্থমন্ত্রীর আবারো সহযোগিতা চেয়েছে ‘রবি আজিয়াটা লিমিটেড’। নিরীক্ষা আপত্তি সংক্রান্ত বিষয়টির সমাধান না হলে চলতি বছরে রবির প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ বাতিল হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটর এই কোম্পানিটি। চলতি সপ্তাহে রবি আজিয়াটার পক্ষে এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ একটি চিঠিতে অর্থমন্ত্রীর কাছে এই সহযোগিতা কামনা করেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, এই কোম্পানিটির বিরুদ্ধে মোট ৮৬৭ কোটি টাকা নিরীক্ষা আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে। এই টাকার মধ্যে বিটিআরসি দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ ৬৭৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে আসল ৫০৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং সুদ ১৬৯ কোটি টাকা। অন্য দিকে, এনবিআর দাবিকৃত টাকা ১৮৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আসল ১৬১ কোটি ৪০ লাখ এবং সুদ ২৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। বিটিআরসির পক্ষ থেকে এই অর্থ দ্রæত পরিশোধ করার জন্য কোম্পানিটিকে একাধিকবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। দাবি পরিশোধ না করায় এখন বিটিআরসির পক্ষ থেকে এই কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ করারও প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আবার এরই মধ্যে রবির পক্ষ থেকে নিরীক্ষা আপত্তির বিষয়ে আদালতে মামলাও করা হয়েছে।
রবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘রবি ২০১৩ সালে বিটিআরসিকে চিঠি দিয়ে তাদের নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করার অনুরোধ করে। ব্যবসার জন্য রবি লাইসেন্স পাওয়ার দীর্ঘ ১৭ বছর পর এ নিরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়, যদিও লাইসেন্সে নিয়মিত (প্রতি বছর) নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। একসাথে ১৭ বছরের নিরীক্ষা কার্যক্রম রবির মতো মোবাইলে অপারেটরকে অযাচিত চাপের মুখে ফেলেছে। ‘
চিঠিতে রবির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ‘এমন একটি অডিট ফার্ম দিয়ে রবির নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, যারা নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মৌলিক অনেক বিষয় মেনে কাজ করেনি। অডিট ফার্মের দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে নিরীক্ষা আপত্তির বিষয়ে রবির কোনো বক্তব্যে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। বেশ কয়েকটি বিতর্কিত বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অর্থ দাবি করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে ‘বেতার তরঙ্গ ও মাইক্রোওয়েভ ফি-এর মূল্যে পরিশোধ, বিটিএস এবং মাইক্রোওয়েভ যন্ত্রপাতির রয়্যালটি ফি, হ্যান্ডসেট রয়্যালটি ফি, অতিরিক্ত অর্থ প্রদান এবং স্থাপনা ভাড়া ও কল চার্জ’ বিষয়ে নিরীক্ষা আপত্তির বিষয়ে রবির ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে।
রবি বলেছে, ‘প্রশ্নবিদ্ধ নিরীক্ষা আপত্তির অর্থ পরিশোধ না করায় বিটিআরসি রবির সব ধরনের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) ইস্যু বন্ধ রাখায় রবিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে রবির এনওসিসহ সব ধরনের অনুমোদন প্রদান বন্ধ থাকার পাশাপাশি ০১৬ নম্বর সিরিজের নতুন নম্বর ব্যবহারের অনুমোদনও দেয়া হচ্ছে না।
অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে কোম্পানিটি বলেছে, রবি সব সময়ই নিয়ম কানুন মেনে এ দেশে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। আমাদের কাছে সরকারের কোনো ধরনের বকেয়া থাকলে আমরা অবশ্যই তা পরিশোধ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা মনে করি, এরপরও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরীক্ষা আপত্তির সমস্যা সমাধান সম্ভব। সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সদয় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বিটিআরসি উদ্ভ‚ত সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেবে বলে আমরা আশা করি।
জানা গেছে, বর্তমানে অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বার্ষিক সভায় যোগদানের জন্য আমেরিকায় অবস্থান করছেন। তিনি দেশে আসার পর তার কাছে রবির এই চিঠি হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে গ্রামীণফোনের সিইওর সাথে বৈঠক করে অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যান। বৈঠকের পর তারা সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, সরকার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দু’টি মোবাইল ফোন কোম্পানি রবি ও গ্রামীণ ফোনের পাওনা আদায়ে অ্যাকশনে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবে। আমাদের সিদ্ধান্তটি হচ্ছে আমরা সব ধরনের পন্থা পরিহার করে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসে সমাধান করা। এতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা কয়েক দিন থেকে আলাপ আলোচনা করে যাচ্ছিলাম তাদের সাথে আমাদের সমাধানে আসা উচিত। যেখানে আমরাও হারব না তারাও হারবে না। আমাদের যেটুকু পাওনা সেটা আমরা আদায় করে নেয়ার চেষ্টা করব। তারাও সেটা মেনে নিবেন আমরা সেটা বিশ্বাস করি। তারা ব্যবসা করবে, আমাদেরকে আমাদের পাওনা বুঝিয়ে দিবে। এ েেত্র তাদের আমরা যেটুকু সাহায্য করা দরকার সেটুকু করব।
কিন্তু এখন প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে অগ্রগতি হওয়ায় অর্থমন্ত্রীর সেই সমাধানের উদ্যোগ দৃশ্যত ভেস্তে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।