বৃহস্পতিবার ● ১০ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ডিপফেক প্রযুক্তি: আসলের মতো, কিন্তু আসল নয়
ডিপফেক প্রযুক্তি: আসলের মতো, কিন্তু আসল নয়
বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে ডিপফেক প্রযুক্তি। ছবি বা ভিডিওকে বিকৃত ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নিখুঁতভাবে তৈরি করে হুবহু আসলের মতো বলে প্রচার করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রযুক্তি জগতে ডিপফেক নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। কয়েক মাস ধরে ডিপফেক বিষয়টি মানুষের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত ৯ মাসে ডিপফেক ভিডিও তৈরি করার বিষয়টি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। অনলাইনে তা পোস্ট করার ঘটনাও বেড়েছে নয় গুণ। এ ধরনের ভিডিও তৈরি করার ব্যবসাও এখন আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, ডিপফেক ঘিরে সবচেয়ে উদ্বেগের জায়গা হচ্ছে রাজনৈতিক বক্তব্যকে বিকৃত করার বিষয়টি। অনেকেই রাজনৈতিক উদ্দেশে ডিপফেক ভিডিও প্রচার করে ফায়দা লুটতে পারে। এ ছাড়া পর্নোগ্রাফির ক্ষেত্রেও ডিপফেক ভিডিওর ব্যবহার উদ্বেগ তৈরি করছে।
ডিপফেক ভুয়া ভিডিও একেবারে আসলের মতো দেখায় বলে ইতিমধ্যে বিনোদন দুনিয়ায় এর ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এর আগে ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ডিপফেক কনটেন্ট ভারতসহ বহুজাতিক জনসংখ্যার দেশে ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। দুষ্কৃতকারীরা বিকৃত কনটেন্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাদ তৈরি করতে পারে।
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ডিপট্রেস সম্প্রতি অনলাইনে থাকা ১৪ হাজার ৬৯৮টি ভিডিওর সন্ধান পেয়েছে, যা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ছিল মাত্র ৭ হাজার ৯৬৪টি।
ডিপপ্রেসের বিশেষজ্ঞরা বলেন, তাঁদের খোঁজ পাওয়া ডিপফেক ভিডিওগুলোর ৯৬ শতাংশ পর্নোগ্রাফির মতো। এতে কোনো বিনোদন জগতের তারকার কম্পিউটারের তৈরি চেহারা ব্যবহার করা হয়, যা পর্নো তারকার চেহারায় বসিয়ে দেওয়া হয়।
ভিডিওতে দেখানো অধিকাংশ অভিনেত্রী যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের। এতে দক্ষিণ কোরিয়ার তারকার চেহারাও ডিপফেক ভিডিওতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে একে বৈশ্বিক ঘটনা বলা হয়।
ডিপট্রেসের প্রতিবেদনে রাজনৈতিক কার্যকলাপে এ ধরনের ডিপফেক ভিডিওর সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
ডিপট্রেসের বিশেষজ্ঞ হেনরি আজদার বলেছেন, এখন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ডিপফেকের অপব্যবহার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ব্যাপক। তবে মানুষ পর্নোগ্রাফিতে ডিপফেকের ক্ষতিকর ব্যবহারের দিকটা ভুলে যাচ্ছে। এটা নারীদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকারের জন্যও এটি উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
২০১৭ সালে রেডিটের একটি পোস্টে ডিপফেকের বিষয়টি উঠে আসে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই বছরের মধ্যে পুরো খাতটি এ থেকে লাভ খোঁজার চেষ্টা করবে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ডিপফেক পর্নোগ্রাফির সাইট ১৩ কোটি ৪০ লাখ দর্শক টেনেছে। অ্যাপের মাধ্যমে এ ধরনের ভিডিও তৈরির সুবিধা বিষয়টিকে আরও উসকে দিচ্ছে।
এ প্রযুক্তি দ্রুত উন্নত হচ্ছে বলে নীতিনির্ধারকদের এখনই এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।