সোমবার ● ৭ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » স্বল্প ও মাঝারি মূল্যের স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাংয়ের বাজিমাত
স্বল্প ও মাঝারি মূল্যের স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাংয়ের বাজিমাত
চলতি বছরের মার্চে গ্যালাক্সি এ১০ স্মার্টফোনটি বাজারে ছাড়ে স্যামসাং। দাম তুলনামূলক কম ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের হওয়ায় এ সিরিজের স্মার্টফোনগুলো ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
মার্চের পর থেকে প্রতি মাসেই গ্যালাক্সি এ সিরিজের নতুন নতুন মডেল বাজারে আনে দক্ষিণ কোরীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি। ক্রেতারাও লুফে নেয় এসব মডেল।
সব মিলিয়ে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) বিশ্বব্যাপী স্যামসাং যত স্মার্টফোন বিক্রি করেছে, তার ৫৬ শতাংশই ছিল গ্যালাক্সি এ সিরিজের।
এ থেকেই বোঝা যায় সিরিজটি কতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মূলত স্বল্প দামে আকর্ষণীয় স্মার্টফোন পাওয়ায় ক্রেতারা গ্যালাক্সি এ সিরিজের ফোন বেশি কিনছেন। ফলে এ সিরিজটির ওপর ভর করে তুলনামূলক স্বল্প ও মধ্যম মূল্যের স্মার্টফোন বাজারে বাজিমাত করেছে স্যামসাং। খবর কাউন্টার পয়েন্ট রিসার্চ।
হংকংভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ বিশ্ববাজারে বিদ্যমান দাম (পাইকারি পর্যায়ে) পর্যালোচনা করে স্মার্টফোনের তিনটি ক্যাটাগরি তৈরি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির এক গবেষণায় ৪০০ ডলারের বেশি দামের স্মার্টফোনকে দামি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। অন্যদিকে ১৪৯ ডলারের কম মূল্যমানের পণ্যকে তুলনামূলক কম দামের স্মার্টফোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ১৫০-৩৯৯ ডলারের মধ্যবর্তী দামের স্মার্টফোনগুলো মাঝারি মূল্যের পণ্যের ক্যাটাগরিতে পড়েছে। মূল্যমানের এ ক্যাটাগরি বিবেচনায় তুলনামূলক স্বল্প ও মাঝারি মানের স্মার্টফোনের বাজারে স্যামসাংয়ের বাজিমাতের খবর দিয়েছে কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ।
এক বিবৃতিতে কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের গবেষক সুজিয়ং লিম বলেন, একসময় স্যামসাং বেশ দামি স্মার্টফোন তৈরি করত। তবে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তিপণ্যটির বাজার পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি তুলনামূলক স্বল্প ও মাঝারি দামের স্মার্টফোনের চাহিদা বেড়েছে। স্যামসাংও পরিবর্তিত বাজার ধরতে বিশেষত তত্পর হয়েছে। বিশেষ করে গ্যালাক্সি এ সিরিজ দিয়ে স্মার্টফোনের বাজারে অবস্থান মজবুত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে তুলনামূলক স্বল্প ও মাঝারি মানের স্মার্টফোনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে মোট বিক্রি হওয়া স্মার্টফোনের ৪১ শতাংশ ছিল ১৪৯ ডলারের কম দামের। দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ শতাংশে। প্রথম প্রান্তিকে মাঝারি মূল্যের ক্যাটাগরির স্মার্টফোন বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৮ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা দাঁড়িয়েছে ৩৭ শতাংশে। আর তুলনামূলক দামি স্মার্টফোন বিক্রির হার প্রথম প্রান্তিকে ছিল ২১ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা কমে ২০ শতাংশে নেমেছে।
বিশ্বব্যাপী ক্রেতারা যখন ফিচার ফোন ছেড়ে স্মার্টফোন ব্যবহার শুরু করেন, তখন প্রাথমিক পর্যায়ে তারা তুলনামূলক স্বল্প দামের স্মার্টফোন কিনতে চান। তাদের সহজাত প্রবণতা থাকে ১০০-১২০ ডলার মূল্যমানের স্মার্টফোন কেনার প্রতি। পরবর্তী ক্রয়ের ক্ষেত্রে তারা দামি স্মার্টফোনের প্রতি ঝোঁকেন। ক্রেতাদের এ প্রবণতা কাজে
লাগিয়ে তুলনামূলক স্বল্প দামের স্মার্টফোনের বাজারে ব্যবসা করেছে চীনা শাওমি ও হুয়াওয়ের মতো কোম্পানিগুলো। তবে দেরিতে নামলেও প্রতিযোগিতায় উতরে গেছে স্যামসাং।
একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের বিরোধ স্যামসাংকে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে বলে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বব্যাপী তুলনামূলক স্বল্প ও মাঝারি দামের স্মার্টফোনের বাজারে হুয়াওয়ের শক্ত অবস্থান ছিল। চীনের বাইরে ১৮০-২৪৯ ডলার মূল্যমানের স্মার্টফোন বিক্রি করে বড় ধরনের মুনাফা করত প্রতিষ্ঠানটি।
তুলনামূলক স্বল্প ও মাঝারি দামের স্মার্টফোনের বাজারে স্যামসাংকে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছাতে সহায়তা করেছে গ্যালাক্সি এ সিরিজের সর্বাধুনিক ফিচার, ওএলইডি ডিসপ্লে, উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরাসহ আনুষঙ্গিক সেবাগুলো। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে অল্প সময়ের ব্যবধানে গ্যালাক্সি এ১০, গ্যালাক্সি এ৩০-এর মতো আকর্ষণীয় সব স্মার্টফোন বাজারে এনেছে স্যামসাং। চলতি বছরেই গ্যালাক্সি এ৯০ বাজারে আসবে। এ স্মার্টফোন ফাইভজি নেটওয়ার্ক সমর্থন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে পরবর্তী প্রজন্মের ওয়্যারলেস প্রযুক্তির স্মার্টফোনেও স্যামসাং সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবে বলে আশা করা যায়।